প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যে কুঁড়ে ঘর থেকে ভেসে আসে শিশু পুত্র অভিষেক সানার মায়াবী কন্ঠে ভরা লোক গানের সুর
প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যে কুঁড়ে ঘর থেকে ভেসে আসে শিশু পুত্র অভিষেক সানার মায়াবী কন্ঠে ভরা লোক গানের সুর।’নিথুর প্রেম ভিখারি করেছে মোরে’ । মা হারানো অভিষেকের গাওয়া এই গানের সুরের মূর্ছনাতেই মোহিত পূর্ব বর্ধমানের বড়শুলের আট থেকে আশি সকলে ।মায়াবী কন্ঠে ভরা গানের জাদুতেই একরত্তি ছেলে অভিষেক গ্রামের সকলের মনের মনিকোঠায় স্থান করে নিয়েছে।বড়শুলের বাসিন্দা চান দিন দরিদ্র পরিবারের ছেলে অভিষেক বড় হয়ে নামজাদা বাউল কিংবা লোকগানের শিল্পী হোক।অভিষেকও সেই স্বপ্নকে আঁকড়েই নিজেদের কুঁড়ে ঘরে রেওয়াজে মগ্ন।
পূর্ব বর্ধমানের প্রত্যন্ত গ্রাম বালিমাঠ।এই গ্রামের চারপাশে থাকা জমির মাঝেই রয়েছে ছিটেবেড়া আর খড়ের চালার তৈরি অভিষেকদের কুঁড়ে ঘরটি। ’নিজভূমি নিজগৃহ’ প্রকল্পে পাওয়া জায়গায় গড়েতোলা ভাঙা ফুটো সেই ঘরেই ৯ বছর বয়সী অভিষেক ও তাঁর ছোট ভাই সহ বাবা,বৃদ্ধা ঠাকুমা ও পিসি বসবাস করেন ।জায়গা মিললেও এখনও পাকা বাড়ি তাঁদের মেলেনি । অভিষেকের যখন ৪ বছর বয়স তখন তাঁকে ও তাঁর ছোটভাই কৌস্তভকে বাড়িতে ফেলেরেখে নিরুদ্দেশ হয়েযান মা ভারতীদেবী ।অভিষেকের বাবা তারকচন্দ্র সানা বালি খাদানে শ্রমিকের কাজ করে যৎসামান্য যা রোজগার করেন তা দিয়েই তাঁদের দিন গুজরান হয়।অভিষেক বড়শুল নিম্নবুনিয়াদি বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ।
তাঁর ভাই কৌস্তভ ওই বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর পড়ুয়া ।বাড়িতে বিদ্যুৎতের বাতির আলোয় পড়াশুনা করার সৌভাগ্যও এখনও তাঁদের হয়নি। ।সন্ধ্যা নামলেই লম্ফ অথবা হারিকেনের আলোই ভরসা অভিষেকদের ।তবে কষ্টের সংসারে অভিষেকই গানের সুরে সবার মন ভুলিয়ে রেখেছে । তারকচন্দ্র সানা বলেন,হারমোনিয়াম পাবার পর প্রথমে অভিষেক নিজেই হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান করতো। বছর দুই হল বড়শুলের বাসিন্দা
মঙ্গল কালিন্দী কোন পারিশ্রমিক না নিয়ে গান শেখাচ্ছেন অভিষেককে ।
মঙ্গলবাবু নিজেই গান লিখে গানের সুর দেন । সেই গানই এখন গেয়ে অভিষেক বড়শুলবাসীর মন জয় করে নিয়েছে । পাশাপাশি অভিষেক তাঁর নিজের ছোট ভাই কৌস্তবকেও একটু একটু করে গানের তালিম দিচ্ছে । মঙ্গল কালিন্দী বলেন , “তাঁর ছাত্র অভিষেকের প্রতিভা রয়েছে । গান গেয়ে এত ছোট বয়সে ও যে ভাবে সবার মন জয় করে নিয়েছে সেটাই সব থেকে গৌরবের বলে মনে তিনি। দূর দূরান্তের সংগীত প্রেমিরাও অভিষেকের কন্ঠে গান শুনতে এখন তাদের কুঁড়ে ঘরে হাজির হচ্ছেন ।