জোড়া মসজিদের উরস পাক পালিত হলো

মহান সুফি সাধক হযরত সৈয়দ শাহ মুরশেদ আলী আল কাদেরী আল বাগদাদী-র ১২৩ তম বার্ষিক উরস উৎসব

‘মওলা পাক’- নামে খ্যাত মহান সুফি সাধক হযরত সৈয়দ শাহ মুরশেদ আলী আল কাদেরী আল বাগদাদী-র ১২৩ তম বার্ষিক উরস উৎসব আজ ৪ই ফাল্গুন, ১৭ ই ফেব্রুয়ারি শনিবার যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। তিনি ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ(সঃ) এর ৩২ তম এবং একই সঙ্গে সুফি কাদেরিয়া তরিকার প্রতিষ্ঠাতা ‘বড় পীর সাহেব’, গওসুল আযম -হযরত আব্দুল কাদির জিলানী-র ১৯ তম বংশধর। ১৩০৭ বঙ্গাব্দের ৪ই ফাল্গুন, ইংরেজি ১৯০১ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ই ফেব্রুয়ারি মওলা পাকের ‘বেসালে হক’ এর পর থেকে বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রতি বছর ৪ই ফাল্গুন এই উরস উৎসব পালিত হয়ে আসছে। এই উপলক্ষ্যে মেদিনীপুর শহরের জোড়া মসজিদে অবস্থিত মওলা পাকের মাযার শরীফে, তাঁর খানকাহ শরীফ দায়রা পাকে ও সাধনস্থল কাঁসাই নদীর তীরে অবস্থিত ইস্ত্রীগঞ্জ পাকে কয়েকদিন আগে থেকেই ভক্ত ও পুণ্যার্থীদের ঢ্ল নেমেছে।


 

মওলা পাক’ এর বর্তমান স্থলাভিষিক্ত উত্তরাধিকারী ও সিলসিলা এ কাদেরিয়া -র সাজ্জাদানশিন এবং সেইসঙ্গে মেদিনীপুর জোড়া মসজিদ ও মাযার শরীফের মুতাওয়াল্লী হযরত সৈয়দ শাহ ইয়াসূব আলী আলকাদেরী-র পরিচালনায় ও তত্ত্বাবধানে বর্তমানে এই উরস পালিত হচ্ছে।
৪ ই ফাল্গুনের এই আন্তর্জাতিক উৎসবের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার পুণ্যার্থী নিয়ে প্রতি বছর একটি স্পেশ্যাল ট্রেনের সরাসরি মেদিনীপুর স্টেশনে আগমন। নিঃসন্দেহে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা।
এ বছর বাংলাদেশের রাজবাড়ী স্টেশন থেকে ১৪ তারিখ বুধবার রাত ১০ টা নাগাদ ২৪ কোচের একটি ট্রেন মহিলা ও পুরুষ সহ মোট ২২৫৬ জন পুণ্যার্থী (পুরুষ ১৩১৮, মহিলা ৮৫৩, অপ্রাপ্তবয়স্ক ৮৫) নিয়ে রওয়ানা হয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার ভোর ৫ টা নাগাদ মেদিনীপুর স্টেশনে এসে পৌঁছেছে।

 

তৎকালীন পূর্ববঙ্গে মওলা পাকের অসংখ্য ভক্ত থাকার কারণে মওলা পাকের ‘বেসালে হক’ এর পরের বছর অর্থাৎ ১৯০২ সালের প্রথম উরস থেকেই তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার পূর্ব বঙ্গের রাজবাড়ী জেলা থেকে এই স্পেশাল ট্রেন প্রতি বছর মেদিনীপুর আসতে শুরু করে। ভারত স্বাধীন হওয়া এবং পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের পরেও এই ঐতিহ্য সমানে চলে আসছে। এছাড়াও বিগত কয়েক বছর থেকে বাংলাদেশের ঢাকা ও অন্যান্য শহর থেকে কয়েকটি রিজার্ভ বাসও পুণ্যার্থীদের নিয়ে ৪ই ফাল্গুনের উরসে আসছে যা দুই দেশের মানুষের সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির সম্পর্ককে উজ্জীবিত করে। ভারত, বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ‘মওলা পাক’ ও তাঁর বংশধরদের ভক্ত ও শিষ্য রয়েছেন। এই উৎসবে তাই জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার মানুষ যোগদান করেন।
এই উৎসবকে কেন্দ্র করে একটি বিশাল মেলা বসে, যা কয়েকদিন ধরে চলে। শহরের প্রতিটি হোটেলে উপচে পড়ছে ভীড়। এলাকার মানুষ তাই সারা বছর ধরে এই উৎসবের জন্য সাগ্রহে প্রতীক্ষা করে থাকেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *