বাড়ির মহিলাদের নিয়ে প্রত্যন্ত গ্রামে বসলো বিশ্ববিদ্যালয় ও মৎস্য বিভাগের মীন পাঠ কর্মশালা
প্রবাদ আছে ‘মাছে ভাতে বাঙালি। প্রশান্ত মহাসগরীয় সভ্যতা লালিত আমাদের এই গাঙ্গেও ব-দ্বীপ অঞ্চলের আদি অধিবাসী অস্টালয়েডরা প্রধান খাদ্য হিসেবে মাছ গ্রহণ করেছিল। বাঙালির মৎস্য প্রীতির উলেস্নখ আছে বেশকিছু ধ্রম্নপদী সাহিত্যে। প্রাচীন সাহিত্য ‘প্রাকৃত পৈঙ্গলে’ লেখা হয়েছে ‘যে স্ত্রী লোক প্রতিদিন তার স্বামীকে মৌরলা-মাছের ঝোল খাওয়ান সে স্বামী হয় পুণ্যবান বা ভাগ্যবান।’ আর বর্তমানে হলদিয়ায় মহিলাদের কেবল মাছ রান্না নয়, কিভাবে মাছের চাষ করেও সংসারে সচ্ছলতা ফেরানো যায় সেই বিষয় হাতে কলমে পাঠ দেওয়া হল।
ইতিপূর্বে হলদিয়া ব্লকের চাউলখোলা গ্রামের গ্রামীণ নারীদের সংগঠিত করে হলদিয়া ব্লক মৎস্য দপ্তর বিভিন্ন কর্মসূচী করে এসেছে। এই গ্রামের মহিলারা শুধু যে সরকারি সহায়তায় মাছের চারা পেয়ে চাষ করেছেন এমন নয় এনাদের নিয়ে “ইলিশ মাছ রক্ষার” সচেতনতার মিছিলও করেছে হলদিয়া ব্লক মৎস্য বিভাগ ।
বাড়ির নিকটবর্তী ছোট পুকুর বা ডোবায় মাছ চাষে এগিয়ে আসা সেই মহিলাদের মধ্যে তিরিশ জন অগ্রনী মহিলাদের বেছে নিয়ে মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়, পূর্ব মেদিনীপুর , পশ্চিমবঙ্গ এবং হলদিয়া পঞ্চায়েত সমিতি, মৎস্য বিভাগ এর যৌথ উদ্যোগে এক অভিনব কর্মসূচী শুভ সূচনা হল, যা রাজ্যে প্রথম এক অভিনব উদ্যোগ। পুঁথি গত মাছ চাষের বিদ্যার সাথে বাস্তবিক চাষের জ্ঞান দিয়ে এক মহিলা কেন্দ্রিক উন্নয়নমুখী মৎস্যগ্রাম গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হল।
৩০ শে মার্চ ২০২২ বুধবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হলদিয়া ব্লকের কিসমত শিবরাম নগর গ্রামে সরকারি সহায়তায় নির্মীত “কৃষ্ণা হ্যাচারী” প্রাঙ্গণে আয়োজিত হল “নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মাছচাষ” শীর্ষক হাতে-কলমে একদিবসীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালা । মহিলারাই কর্মশালার যাবতীয় ব্যবস্থাপনা নিজেরাই সামলালেন। প্রশিক্ষনে অংশগ্রহন ও অথিতিদের আপ্যায়ন দুই সামাল দিল একসাথে। প্রশিক্ষার্থি মহিলাদের উদ্বোধনী সংগীতের মাধ্যমে কর্মশালা সুরু হয়।
এই কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুব্রত কুমার দে, হলদিয়ার বিডিও সঞ্জয় দাস, হলদিয়ার মৎস্য চাষ সম্প্রসারণ আধিকারিক সুমন কুমার সাহু, মৎস্য-প্রানী কর্মাধ্যক্ষ গোকুল মাজি, রাজ্য-জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত বিজ্ঞানী ডক্টর প্রতাপ কুমার মুখোপাধ্যায়, ডব্লিউ বি সি এ ডি সি-র ডঃ উত্তম লাহা প্রমুখ । উপস্থিত মৎস্য বিশেষজ্ঞ রা মাছ চাষের বিষয় গুলি হাতে কলমে সহজ পদ্ধতিতে মহিলাদের বোঝান। এছাড়াও কৃষ্ণা হ্যাচারীর মালিক সুব্রত কুমার মাইতি হাতে কলমে মাছের প্রজনন কিভাবে হয় দেখান। একদিবসীয় এই প্রশিক্ষনের শেষে অংশগ্রহণকারী মহিলাদের হাতে শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয়।
টেকসই মৎস্যসম্পদ বিনির্মাণে নারীর অংশগ্রহণ এবং নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের এক অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত কর্মসূচীতে গ্রাম জুড়ে ছিল আজ এক উৎসবের মেজাজ। হলদিয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুব্রত কুমার হাজরা এই কর্মশালার সার্বিক সাফল্য কামনা করেছেন।