শিয়ালদহ স্টেশনের রূপ বদল , দেখে নিন

সকালে তেমন কোনো পূর্বাভাস না থাকায় ছাতা ছাড়াই বেরিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু শিয়ালদহ (sealdah station) আসতে না আসতেই বৃষ্টির তোড়। প্ল্যাটফর্মের বাইরে বেরোনোর উপায় নেই ছাতা ছাড়া। তাই ছাতা কিনতেই হবে, স্টেশন ভেতরেই চোখে পড়ল বড় ছাতার দোকান। মুশকিল আসান।

ছাতা কিনে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিন। স্টেশনের মধ্যেই বড় ছাতার দোকান! শুনতে অবাক লাগলেও এক ছাদের তলায় এখন প্রয়োজনীয় সব সামগ্রী মিলছে। ঠিকানা শিয়ালদহ স্টেশন। জামা-কাপড় থেকে শুরু করে গয়না, সবেরই সম্ভার এখানে। নাম ‘ফ্যামিলি মল’।

বিভিন্ন ধরনের উপাদেয় খাবার থেকে জামা কাপড় কী নেই এই মলে। লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত কলকাতার এই ব্যস্ততম স্টেশনে। দূরপাল্লার ট্রেন থেকে শুরু করে লোকাল থামে এখানে। মানুষের ব্যস্ততার মধ্যেও কেনাকাটার সম্ভার সাজানো শিয়ালদহে। সঙ্গে যাত্রীদের আরামদায়ক পরিবেশও বজায় আছে। গতবছরের লকডাউনের মধ্যেই ভোল বদলে গেছে শিয়ালদহ স্টেশনের।

বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের দোকান খুলেছে স্টেশনের মধ্যেই। একদিকে যেখানে ট্রেনের আনাগোনা চলছে, মাইকে বাজছে ট্রেনের ঘোষণা, তেমনই অপরদিকে শপিং মলের মেজাজ আছে। আয় বাড়াতে শিয়ালদহের মতো দেশের বড় রেল স্টেশনগুলোর বাড়তি জমি বেসরকারি হাতে দিয়েছে রেল। এক রেল কর্তার কথায়, এরফলে স্টেশনের বাণিজ্যিক গুরুত্ব বাড়ছে।

ভবিষ্যতে স্টেশন বেসরকারি হাতে তুলে দিলে রেল অনেক বেশি অর্থ দাবি করতে পারবে। যাতায়াতের পথেই অনেকে সেরে ফেলছে কেনাকাটা। তারওপর সামনে পুজো, হাতে সময় কম, তাই স্টেশনের মধ্যেই এমন সুবিধা পাওয়ায় খুশি নিত্যযাত্রীরা। ‘সবচেয়ে বড় সুবিধা হয়েছে কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে। আর মানুষ ভিড় এড়িয়ে কেনাকাটা করতে পারছে। সময়ও বাঁচছে।’

এমন উদ্যোগে খুশি নিত্যযাত্রী প্রীতম চৌধুরীর মত অনেকেই। যেমন পুজোর কেনাকাটা এখান থেকেই শেষ করার ইচ্ছা অঞ্জনা মজুমদারের। তাঁর কথায়, ‘এখানে যেমন গয়নাও পাওয়া যাচ্ছে আবার জামাকাপড়ও পাওয়া যাচ্ছে। সত্যিই খুব ভাল হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও উন্নত হবে। সবচেয়ে বড় কথা আমাদের মতো মানুষের খুব সুবিধা হল।’

যেমন খুশি যাত্রীরা, তেমনই খুশি এখানকার দোকানদাররা। এক গয়না দোকানের ম্যানেজারের কথায়, ‘এখানে দিনে কয়েক লাখ মানুষ শিয়ালদহ স্টেশনে যাতায়াত করছেন রোজ। যাতায়াতের পথে দোকানে আসছেন। না কিনলেও দেখে যাচ্ছেন, পরে আমাদের অন্য শোরুম থেকেই সেটা কিনছেন। এরফলে খুব ভাল ব্র্যান্ডিং হচ্ছে।

এমন জায়গায় শোরুম হওয়ায় মানুষের চোখে পড়ছে।’ একই সুরে সুর মিলিয়েছেন ওখানকার অন্যান্য পণ্যের বিক্রেতারাও। এক নামি ছাতা-ব্যাগের দোকানের কর্মচারী বলেন, ‘স্টেশনে নেমেই মানুষ যেমন পাচ্ছেন জামা-কাপড়, গয়না কিনতে, তেমনই প্রয়োজনীয় ছাতা, ব্যাগ, রেনকোটও কিনতে পারছেন একই জায়গায়।

পুজোর আগে আমাদের বিভিন্ন অফার থাকে সেইগুলোও এখানে থাকায় নিত্যযাত্রীরা খুশি হচ্ছেন।’ তেমনই একই কথা বললেন স্টেশনে জামা-কাপড়ের দোকানের এক মালিক। খাবারেও নানা সম্ভার সাজানো স্টেশন চত্বরে। ছোট থেকে বড় বিভিন্ন স্টল গড়ে উঠেছে এখানে।

বড় রেস্টুরেন্টে ঢুকেও যেমন যাত্রীরা পছন্দের খাবারের স্বাদ নিতে পারেন কম দামে, তেমনই বিভিন্ন ছোট স্টলেও থাকছে খাবারের একরাশ ভাণ্ডার। তেমনই এক রেস্তোরাঁয় ঢুকে দেখা গেল রীতিমতো লোকের ভিড়। ‘এত সুন্দর ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে এত কম দামে খাবার মিলছে যা সত্যিই ভাল বিষয়’ জানালেন মোহন সাউ।

সেই রেস্তোরাঁই ম্যানেজারের কথায়, ‘এমন উদ্যোগে যেমন যাত্রীরাও সুবিধা পাচ্ছেন, ব্যবসার দিক থেকেও বেশ ভালো।’ বিখ্যাত এক ভুজিওয়ালা দোকানের ম্যানেজার জানালেন, ‘শিয়ালদহতে দোকান করায় বহু মানুষের কাছে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে। এমনকি আমাদের এই দোকান থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীদের জন্যও সুযোগ আছে।

তাই ভিড়ও হচ্ছে ভালো।’ শুধু তাই নয়, ট্রেনের অপেক্ষা করার জন্য ঝাঁ চকচকে প্রতীক্ষালয়েরও সুবিধা পাচ্ছেন যাত্রীরা। ক্লান্তি দূর করার ব্যবস্থাও আছে সেখানে। বাকি আরও অনেকে কাজ। তৈরি হচ্ছে আরও অনেক নতুন নতুন দোকান। উল্টোদিকে, হাওড়ার স্টেশনের চিত্রও বদলাচ্ছে।

যা চকচকে হয়ে উঠছে কলকাতার আরেকটি অন্যতম ব্যস্ত স্টেশন। প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষের যাতায়াতের কেন্দ্রস্থল হাওড়া স্টেশন। সারা দেশের থেকে নানা প্রান্তের দূরপাল্লার ট্রেন এসে থামে হাওড়ায়। সেই হাওড়া স্টেশনেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। গড়ে উঠেছে বিভিন্ন খাবারের স্টল। ঝাঁ চকচকে স্টলে সুস্বাদু খাবারের সম্ভার সাজানো। নিত্যযাত্রী থেকে দূরপাল্লার যাত্রীরাও ভিড় জমায় এইসব দোকানে।

পাশাপাশি আছে, বিভিন্ন ব্যাঙ্কের এটিএম। তবে শিয়ালদহের মতো এখনই হাওড়া স্টেশনের ভোলবদল হবে না বলে জানালেন পূর্ব রেলের সিপিআরও একলব্য চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে হাওড়া নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই। যেহেতু ঘিঞ্জি তাই ওখানে এখনই কিছু করা সম্ভব নয়।’ এরপরে কলকাতা ও আসানসোল স্টেশনে রূপও পাল্টে যাবে বলে জানান তিনি। যদিও হাওড়ার আগের চেনা ছবি এখন নেই। নতুন ক্যানভাসে তুলির টানে আঁকা নতুন এক ঝকঝকে চিত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *