পটেশ্বরী দুর্গাপুজো বর্ধমান মহারাজের তৈরি লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ ঠাকুর বাড়িতে

নামেই রাজবাড়ি।রাজ অট্টালিকার ছত্রে ছত্রে মলিন দশা। ভগ্নপ্রায় নাট মন্দিরে  তবুও দেবী নিষ্ঠার সঙ্গে আজও পুজিত হন

নামেই রাজবাড়ি।রাজ অট্টালিকার ছত্রে ছত্রে মলিন দশা। ভগ্নপ্রায় নাট মন্দিরে  তবুও দেবী নিষ্ঠার সঙ্গে আজও পুজিত হন । বর্ধমান মহারাজের আমলে ধুমধাম করে পটেশ্বরী দুর্গাপুজো হত।এখানে কোন মাটির মূর্তির পুজো হত না। বহু মানুষের আগমন হত বর্ধমান মহারাজের তৈরি লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ ঠাকুর বাড়িতে।  দামোদর নদীর ওপার থেকেও অনেক মানুষজন পায়ে হেঁটে, গরুর গাড়িতে করে আসতেন এই মন্দিরে পুজো দেখতে। জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পুজো হত। প্রত্যেকদিনই ভিড় হত  মন্দির প্রাঙ্গনে। তবে রাজ পরিবারের প্রথা অনুযায়ী রাজ পরিবারের মহিলারা সবার সামনে আসতেন না। রাজবাড়ি থেকে গোপন রাস্তা দিয়ে তাঁরা এই মন্দিরে প্রবেশ করতেন এবং মন্দিরের দ্বোতলায় দর্শনির মাধ্যমে পুজো ও নানান অনুষ্ঠান দেখতেন। মন্দিরে থাকা মানুষজন এই রাজ পরিবারের মহিলাদের দেখতে পেতেন না। এখনও দুর্গাপুজোর সময় ভিড় হয়।বর্তমানে একটি ট্রাষ্টের মাধ্যমে দেখাশুনা করা হয় মন্দিরে। তবে রয়েছে রক্ষণাবেক্ষণের অভাব।  করোনার প্রকোপে গত দু’বছর পুজোর আয়োজন ভাটা পরেছিল।

 

তবে জৌলুস কমলেও পুজোর আচার রীতিনীতি কোন পরিবর্তন হয়নি।এখনো আগের মতই পুরানো রীতি মেনেই রাজপরিবারে মা পটেশ্বরী দুর্গার পুজো হয়। মহালয়ার পরের দিন থেকে বর্ধমানের মহারাজার মন্দিরে দুর্গাপুজো শুরু হয়। পুজোর সময় রাজপরিবারের এক মাত্র বংশধর প্রণয় চাঁদ মহাতাব ন’দিন সস্ত্রীক বর্ধমানে থাকেন এবং নিজে পুজোয় বসেন। তবে করোনা আবহে গত দু’বছর তিনি আসেননি।এবার তার আসার সম্ভাবনা আছে বলে জানালেন বর্তমানে এই মন্দিরের সেবাইত উত্তম মিশ্র।এখানে উল্লেখ্য পটেশ্বরী দুর্গাপুজো শুরু করেন তৎকালীন বর্ধমানের মহারাজ  মহাতাব চাঁদ। আজ থেকে প্রায় ৩৫০ বছর আগে।দেবী দুর্গা এখানে শালকাঠের কাঠামোর উপর প্রতিষ্ঠিত।কাঠের কাঠামোর উপর নানা রং দিয়ে নিপুণ তুলির টান তৈরি দশভুজার সপরিবার। এখানে একমাত্র গণেশ ছাড়া দুর্গা,লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক এবং অসুরের মুখের ছবি এমন ভাবে আঁকা আছে শুধুমাত্র একটি চোখ দেখা যায়।

 

শুধু তাই নয় মা দুর্গা বাহন সিংহের জায়গায় আঁকা আছে ঘোড়ার ছবি।পটেশ্বরী দুর্গার ১২ বছর অন্তর একবার রঙ করা হয়।কিন্তু রঙের পর মা দুর্গার রূপের কোন পরিবর্তন হয়না। রাজার আমলের রীতিনীতি মেনেই লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরে মহালয়ার দিন থেকে দুর্গাপুজো শুরু হয়। এখানে বলি প্রথা আছে। তবে মেষ-মহিষ বা ছাগ বলি হয়না। রাজাদের আমলে কুমড়ো বলি হত।এখন অবশ্য  কুমড়ো  বলির জায়গায় মণ্ডা বলি হয়।অষ্টমীর দিন মা পটেশ্বরী সামনে নবকুমারী পুজো হয়। শোনা যায় এই মন্দির প্রতিষ্ঠা হবার আগে পাশের একটি মন্দিরে দেবী পূজিতা হতেন। পরে মহারাজ মহাতাব চাঁদ এই মন্দির স্থাপন করে দেবীকে এখানে নিয়ে আসেন। আগে যেখানে মন্দির ছিল বর্তমানে সেখানে একটি কলেজ স্থাপন করা হয়েছে।পুজোর দিনগুলি রাজপরিবারের পটেশ্বরি দুর্গা প্রতিমা দেখতে বহু মানুষ আসেন মন্দিরে।নবমীর দিন রাতে গুজরাটি সম্পদায়ের মানুষজন নাটমন্দিরে ডাণ্ডিয়া নৃত্য অংশ গ্রহন করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *