বাড়িতে থাকা বস্তায় আদা চাষেই বিপুল লাভের সম্ভাবনা

চাষিরা প্রায় ৩২-৩৫ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারেন। যেখানে খরচ হয়েছে মাত্র ৫০০০ টাকা।

বস্তায় আদা চাষের মাধ্যমে চাষিরা স্বাধীনভাবে খুব কম পুঁজি নিয়ে তাঁদের নিজের ব্যবসা শুরু করতে পারেন।শুধু গ্রামাঞ্চল নয়, শহুরে চাষাবাদে খুব কম জায়গায় বাড়ির ছাদে, বাগানে, ফাঁকা জায়গায় এই আদা চাষ সহজেই করা যায়।আদা খুবই খুবই পরিচিত একটি ফসল।আদা নানা ধরনের রোগ যেমন জ্বর, সর্দি, কাশি নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পশ্চিমবঙ্গ, অসম, মেঘালয়, ওড়িশা, কর্ণাটক, অরুণাচল প্রদেশ, গুজরাট আদা চাষে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আদা চাষ মাটিতে আর বস্তায় দু’রকমভাবেই করা যায়। বস্তায় আদা চাষ খুব লাভজনক, যা সহজেই করা যায়।

উপযুক্ত সময়:- ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে আদা চাষ শুরু করা যায়।
*বস্তায় খুব অল্প খরচে ও খুব সহজেই আদা চাষ করে লাভবান হতে পারেন।
*বাড়ির ছাদে, বারান্দায়, বাড়ির বাগানে, যে কোনও ফাঁকা জায়গায় চাষি ভাইরা আদা চাষ করতে পারেন।
*বস্তায় আদা চাষ করলে শ্রমিক খরচ, মাটি প্রস্তুত খরচ, সেচ খরচ, আদা তোলার খরচ অনেক কম হয়।

বস্তায় আদা চাষের উপকরণ:-
যে কোনও বস্তা, সিমেন্টের বস্তা, গোবর সার, কোকোপিট, মাটি, ছাই, রাসায়নিক সার, বীজ শোধন সার, ফুরাডান, ধানের তুষ, কাঠের গুঁড়ো, নিমের খোল ব্যবহার করা হয়।

কোন কোন উপকরণ কী কী মাত্রায় থাকবে:-
*যদি আমরা ভাল করে আদা চাষ করতে চাই এক একটি বস্তা মোটামুটি ১৫ কেজি ওজনের হবে।
*মোটামুটি ৭ কেজি মাটি, ৪ কেজি গোবরসার, ১.৫ কেজি ছাই, ১ কেজি কোকোপিট, ধানের তূষ দিতে হবে।
*রাসায়নিক সার, ফুরাডন, বালি মিলিয়ে ১.৫ কেজি মেশাতে হবে। ডিএপি , এমওপি দুটোই ১০-১২ গ্রাম করে দিতে পারেন।
*এইসব উপকরণ খুব ভাল করে মিশিয়ে এক একটি বস্তা আদা চাষের উপযুক্ত করে তুলতে হবে। তাতে খুব ভাল আদা উৎপাদন করতে পারা যায়।

বস্তায় আদা চাষের পদ্ধতি:-

ভাল আদা উৎপাদনে মাটি তৈরি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাটির সঙ্গে ভাল করে কোকোপিট, ধানের তুষ, কাঠের গুঁড়ো, ছাই মেশাতে হবে, যাতে খুব সহজেই জল বেরিয়ে যেতে পারে। বর্ষা কালে বৃষ্টির জল পড়লেও মাটি জমাট বাধবে না, যার ফলে মাটির নিচে আদা খুব ভালভাবে বাড়তে পারে।
মাটি প্রস্তুত করার পর বেশ কয়েকদিন মাটি খোলা জায়গায় ফেলে রাখতে হবে।
বাজার থেকে চোখ বেরিয়ে গেছে এমন আদা কিনে ভাল করে ব্যাভিস্টিন বা ট্রাইকোডার্মা বা ম্যানকোজেব দিয়ে শোধন করতে হবে।
প্রতি লিটার জলে তিন গ্রাম ম্যানকোজব মিশিয়ে শোধন করতে হবে। যেটাকে আমরা বীজ শোধন বলে থাকি।
আদা শোধন হয়ে গেলে যেখান দিয়ে চোখ বেরিয়েছে সেখান দিয়ে ছুরি দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করে একটা পাত্রের মধ্যে রাখতে হবে।
তিন থেকে চার মিনিট শোধন করে আদা গুলোকে ভাল করে শুকিয়ে নিতে হবে।
যে মাটি তৈরি করা হয়েছিল সেই মাটি এবার ভাল করে বস্তাতে ভরতে হবে।
এবার টুকরো করা আদা খুব সাবধানে বস্তায় মাটির মধ্যে বসিয়ে দিতে হবে, এমন ভাবে বসাতে হবে যাতে আদার চোখ গুলো না ভেঙে যায়।
প্রতি বস্তায় চাষিরা চার থেকে পাঁচটি আদার টুকরো রোপণ করতে পারবেন।
চাষিভাইরা যত খুশি বস্তায় আদা চাষ করতে পারেন। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যাতে প্রতি বস্তায় চারটি থেকে পাঁচটির বেশি আদার অঙ্কুরিত টুকরো না থাকে।
বীজ বা আদার টুকরো বস্তায় খুব ভালভাবে রোপণ করার পর শুকনো গাছের পাতা, বা খর দিয়ে ভালভাবে বস্তা ঢেকে দিতে হবে। বস্তায় মাটি শুকিয়ে না যায় বা গরম কালে মাটিতে যেন রস থাকে।
প্রতিটি বস্তার নিচে ভাল করে তিন থেকে চারটি ছিদ্র করে দিতে হবে। যাতে কোনওরকম ভাবে জল পড়লেও জল জমতে না পারে।
বীজ রোপণ পর ঠিক ২০–২২ দিন পর থেকে আদা গাছ বেরোতে শুরু করবে।
সেই সময় বস্তায় যাতে আগাছা না হয় সেই দিকে খুব ভাল করে নজর দিতে হবে।
খুব রোদ পরে এমন জায়গায় বস্তা রাখা যাবে না। এই দিকে নজর দিতে হবে। খুব গরম পড়লে হ্যান্ড স্প্রেয়ার মেশিন দিয়ে জল অল্প অল্প করে স্প্রে করে দিতে হবে।
চাষিভাইরা নিমের খোল দিতে পারেন ছত্রাক নাশক সার হিসেবে।লক্ষ রাখতে হবে যাতে জল বেশি না পড়ে, তাহলে আদা পচে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
বর্ষা কালে বিশেষ ভাবে নজর দিতে হবে, যাতে আদার বস্তায় বৃষ্টির জল না জমা হয়, সেই ক্ষেত্রে যেখানে বস্তা রাখা আছে উপরে ছাউনির ব্যবস্থা করলে খুব ভাল হয়।
বেশি জল দিলে আদা পচে যাবার সম্ভাবনা থাকে। সে ক্ষেত্রে ৭-১০ দিন অন্তর অন্তর অল্প অল্প জল দিতে হবে।
এক মাস পর চার থেকে পাঁচ ইঞ্চি আদা গাছ বেরিয়ে যাবে।
৯ থেকে ১০ মাস পর আদা গাছ যখন হলুদ বর্ণ ধারণ করবে তখন আমাদের আদা তোলার সময় হয়ে এসেছে এটা ধরে নিতে হবে। আর আমাদের আদা তোলার ব্যবস্থা করতে হবে।

আদা চাষে আয়ের পরিমাণ:-

মোটামুটি ২০০ বস্তা আদা চাষের জন্য আমাদের ১০-১২ কিলো আদা বীজ কিনতে হবে। যার বাজারমূল্য ২০০০ টাকা। রাসায়নিক সার, আর অন্যান্য জিনিসের জন্য আরও ২০০০ টাকা লাগবে। মাটি তৈরির জন্য চাষি ভাইদের আরও ১০০০ টাকা খরচ। সব মিলিয়ে ৫০০০ টাকা ব্যয় হবে। এবার পাইকারি বাজারে বিক্রি করলে বেশি টাকা উপার্জন করতে পারবেন চাষিরা। স্থানীয় বাজারেও চাষিরা এই আদা খুব সহজেই বিক্রি করতে পারবেন। কোনও রকম মিডিলম্যান ছাড়া আদা বিক্রিতে চাষিভাইরা বেশি টাকা উপার্জন করতে পারবেন।
এক একটা বস্তায় প্রায় ২ কিলো করে আদা খুব সহজেই উৎপাদন সম্ভব যদি সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়। তাহলে ২০০ বস্তা থেকে আমরা প্রায় ৪০০ কিলো আদা পেতে পারি। প্রতি কেজি নতুন আদার দাম বর্তমান বাজারে ৮০-৯০ টাকা। সংরক্ষিত আদার দাম বর্তমান বাজারে প্রায় ১০০ টাকা বা তার একটু বেশি। তাহলে খুব সহজেই অল্প সময় এই ৪০০ কেজি আদার থেকে চাষিরা প্রায় ৩২-৩৫ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারেন। যেখানে খরচ হয়েছে মাত্র ৫০০০ টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *