বিহার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তেজস্বী যাদবের নির্বাচনী লড়াইয়ের প্রধান বিষয়গুলি নিচে তুলে ধরা হলো:
এই মুহূর্তে বিহারের বিধানসভা নির্বাচন চলছে, এবং মোদী বনাম তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের (RJD, কংগ্রেস ও বাম দল) মধ্যেকার মূল বিবাদ ও আক্রমণের বিষয়গুলি হল:
১. প্রধান আক্রমণের বিষয়: ‘জঙ্গল রাজ’ বনাম ‘বেকারত্ব’
নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র (NDA) আক্রমণ (বিজেপি-জেডিইউ জোট):

Read More – https://www.facebook.com/photo?fbid=1176124621282638&set=a.565853285643111

- ‘জঙ্গল রাজ’ এর অভিযোগ: প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর বক্তৃতায় মূলত তেজস্বী যাদবের বাবা লালু প্রসাদ যাদব এবং আরজেডি (RJD)-র পূর্ববর্তী শাসনকালকে ‘জঙ্গল রাজ’ (আইন-শৃঙ্খলার অবনতি) বলে আক্রমণ করছেন। তিনি বলছেন, লালু-রাবড়ীর জমানায় বিহারে অপরাধ, অপহরণ ও অরাজকতা চরম আকার নিয়েছিল। মোদীর মূল বার্তা হলো, তেজস্বীর জমানায় সেই ‘জঙ্গল রাজ’ ফিরে আসবে।
- দুর্নীতির অভিযোগ: মোদী প্রায়শই লালু প্রসাদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির মামলাগুলির প্রসঙ্গ টেনে আনেন এবং বলেন যে তেজস্বী যাদব সেই দুর্নীতির ঐতিহ্যেরই ধারক ও বাহক। তিনি রাহুল গান্ধী এবং তেজস্বী যাদব উভয়কেই ‘সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত পরিবারের’ প্রতিনিধি হিসেবে আক্রমণ করেছেন।
তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের আক্রমণ:
- ‘বেকারত্ব’ এবং ‘পলায়ন’: তেজস্বী যাদবের প্রধান প্রচারের বিষয় হলো বিহারের ‘বেকারত্ব’ এবং কাজের সন্ধানে রাজ্যের যুবকদের বাইরে চলে যাওয়া (পলায়ন)। তিনি দাবি করেছেন যে ক্ষমতায় এলে তিনি প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে ১০ লাখ সরকারি চাকরি দেবেন। এই প্রতিশ্রুতি যুবকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
- মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ: মহাজোটের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য নীতীশ কুমার। তেজস্বী তাঁকে ‘থাকা মুখ্যমন্ত্রী’ (Tired CM) বলে কটাক্ষ করছেন এবং অভিযোগ করছেন যে গত ১৫ বছরে নীতীশ কুমারের শাসনে রাজ্যের উন্নয়ন স্তব্ধ হয়ে গেছে।
- জনসভাগুলিতে ভিড়: তেজস্বীর জনসভাগুলিতে বিশাল সংখ্যক যুবকদের ভিড় দেখা যাচ্ছে, যা ইঙ্গিত করে যে তাঁর ‘চাকরি’র প্রতিশ্রুতি ভোটারদের, বিশেষত তরুণ ভোটারদের প্রভাবিত করছে।
২. মূল ইস্যু এবং বিতর্ক:
| ইস্যু | মোদী/এনডিএ-র অবস্থান | তেজস্বী/মহাজোটের অবস্থান |
| কর্মসংস্থান | এনডিএ দাবি করছে যে তারা স্থিতিশীল সরকার দিয়েছে এবং বড় শিল্পের জন্য পরিবেশ তৈরি করছে। তারা তেজস্বীর ১০ লাখ চাকরির প্রতিশ্রুতিকে ‘মিথ্যা’ বা ‘অবাস্তব’ বলে উড়িয়ে দিচ্ছে। | এটি মহাজোটের মূল এজেন্ডা। তেজস্বী এই ইস্যুকে নীতীশ কুমার সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হিসেবে তুলে ধরছেন। |
| পরিচয়/ঐতিহ্য | প্রধানমন্ত্রী মোদী বিহারের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জাতীয়তাবাদ এবং রাজ্যের সাংস্কৃতিক গর্বের কথা বলছেন। সম্প্রতি তিনি ছট পূজাকে UNESCO ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ-এর মর্যাদা দেওয়ার জন্য জোর দিয়েছেন। | তেজস্বী নিজেকে লালু প্রসাদের পুত্র এবং গরিবদের কণ্ঠস্বর হিসেবে তুলে ধরছেন। তিনি জাতপাতের রাজনীতি না করে সরাসরি উন্নয়ন ও চাকরির কথা বলছেন। |
এনডিএ দাবি করছে যে তারা গত ১৫ বছরে বিহারে আইন-শৃঙ্খলা, বিদ্যুৎ ও রাস্তাঘাটের উন্নতি করেছে এবং ‘জঙ্গল রাজ’-এর অবসান ঘটিয়েছে। | মহাজোট এই উন্নয়নকে যথেষ্ট নয় বলে দাবি করছে এবং রাজ্যের খারাপ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, শিক্ষা ও অবকাঠামোর জন্য নীতীশ কুমারকে দায়ী করছে। |
৩. ভোটের গতিপ্রকৃতি:- তারুণ্যের আবেগ: তেজস্বী যাদব তাঁর প্রচারের মাধ্যমে বিহারের তরুণ সমাজের মধ্যে একটি পরিবর্তনের আবেগ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।
- মোদী ফ্যাক্টর: এখনও পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনসভাগুলিতে প্রচুর ভিড় হচ্ছে, যা এনডিএ-র জন্য একটি প্রধান ভরসা। বিহারের ভোটারদের একটি বড় অংশ এখনও মোদীর নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল।
- নীতীশ কুমার ফ্যাক্টর: নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে থাকা শাসকবিরোধী মনোভাব (Anti-incumbency) এনডিএ জোটের জন্য কিছুটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। তবে একই সঙ্গে তাঁর ‘সুশাসন’-এর ইমেজও কিছু সংখ্যক ভোটারকে প্রভাবিত করছে।
এই নির্বাচন এখন মূলত এনডিএ-র ‘স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন’ এবং ‘জঙ্গল রাজ’ প্রতিরোধের বার্তা বনাম মহাজোটের ‘পরিবর্তন’ এবং ‘কর্মসংস্থান’ এর প্রতিশ্রুতির মধ্যেকার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।











