রোজ ভিডিও কলে মৃত ছেলের সঙ্গে কথা বলেন মা ‘আজ কেমন আছিস তুই?’

আহমেদাবাদঃ(INTERNET) ‘কেমন আছিস তুই? খেয়েছিস? ওঁরা আজ কি খাবার দিয়েছে? রান্না ভাল হয়েছিল? ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করছি সবসময়, তুই খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে আমার কাছে ফিরে আয়।’ সিভিল কোভিড (Coronavirus) হাসপাতালের সামনে বসে ছেলের সঙ্গে পরম স্নেহে ভিডিও কলে কথা বলছিলেন বছর ষাটের পুনম সোলাঙ্কি। ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ছিল ছেলে মহেন্দ্র সোনির (৩০) মুখ। উত্তরও আসছিল মায়ের জিজ্ঞাসা করা প্রতি প্রশ্নের। এরপরে ফোন কেটে দেন। পাঁচ মিনিটের এই কথোপকথনে কোথাও কোনও অস্বাভাবিকতা পেলেন? স্বাভাবিকভাবেই উত্তর হবে ‘না’।

কিন্তু এই গোটা ঘটনাটাই যদি শুধুমাত্র কল্পনার ভিত্তিতে রোজ ঘটান পুণম সোলাঙ্কি? নিশ্চই বোঝানো গেল না? আসলে পুণমের একমাত্র সন্তানের মৃত্যু হয়েছে দীর্ঘ ছ’মাস আগেই। সে কথা পুণম জানেন। ছেলের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে তাঁর সামনেই। কিন্তু মন মানেনি, তাই ছেলের মৃত্যুর পরেও রোজ একই সময়ে হাসপাতালের সামনে পৌঁছে যান বছর ষাটের অসহায় মা, তারপর ছেলেওর করথা শেষদিন কথা বলার রেকর্ড করে রাখা ভিডিও কলের একটি পাঁচ মিনিটের ভিডিও চালিয়ে বসে থাকেন। ভিডিও দেখা শেষ হয়ে গেলে, ফের ফিরে আসেন বাড়ি।

১২০০ শয্যার ওই করোনা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন পুণমের একমাত্র ছেলে মহেন্দ্র সোনি। ২৪ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয় তাঁর। পুণম রোজ হাসপাতালের সামনে বসে যে ভিডিওটি দেখেন,। সেটি সেদিনের ভিডিও কলের। পুণমের এক আত্মীয় TOI-কে জানিয়েছেন, ‘নারোলে একটি মিল্ক পার্লার চালাতেন মহেন্দ্র। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরে তাঁকে সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে মৃত্যুর আগে ৬-৭ দিন ভর্তি ছিলেন। মহেন্দ্র মায়ের অত্যন্ত প্রিয়, সে কথা তাঁদের আত্মীয়-প্রিয়জনেরা সকলেই জানতেন।” তিনি আরও বলেন, “মহেন্দ্র ছ’মাস আগে মারা গিয়েছে, এ কথা পুণম জানেন। কিন্তু মেনে নিতে পারেননি। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে একই সময়ে সিভিল হাসপাতালে পৌঁছে যান। সেখানে গিয়ে মহেন্দ্রকে খুঁজে পান তিনি। আমরা জানি এটা ঠিক নয়। কিন্তু মায়ের মনকে শান্তনা দিতে আমরা নিরুপায়।”

বৃদ্ধা মায়ের মৃত সন্তানকে খুঁজে বেরানোর এই খবর সামনে আসার পরে অনেকেই চোখে জল ধরে রাখতে পারেননি। অনেকেই এর পরেও মানুষ কেন সচেতন হচ্ছেন না, তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে এই ঘটনা একটি উদাহরণ মাত্র, এমন ঘটনা রোজ ঘটছে আমাদের চারপাশে, তাই সচেতন হন। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ দয়া করে বাড়ির বাইরে বেরোবেন না। করোনা এখন বাতাসের মাধ্যমেও ছড়াচ্ছে, তাই সর্বদা যথাযথভাবে মাস্ক পরুন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। নিজে সচেতন, সতর্ক হন, অন্যকে সতর্ক করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *