গরিবের ভগবান
ডা.গীষ্পতি চক্রবর্তী যা গরিবের ভগবান নামে পরিচিত যদিও ডাক্তার দের বলাহয় ভগবানের একটা অংশ কিন্তু বর্তমানে কিছু কিছু অসাধু চিকিৎসকদের কারনে কেউ কেউ সেখান থেকে মুখ ফেরান
ডা.গীষ্পতি চক্রবর্তী।যা গরিবের ভগবান নামে পরিচিত।যদিও ডাক্তার দের বলাহয় ভগবানের একটা অংশ।কিন্তু বর্তমানে কিছু কিছু অসাধু চিকিৎসকদের কারনে কেউ কেউ সেখান থেকে মুখ ফেরান।তবে বর্ধমান শহরের ডা.গীষ্পতি চক্রবর্তী অন্যান্য চিকিৎসকেদের থেকে সম্পূর্ণই ভিন্ন।বর্ধমান জেলা সহ গোটা রাজ্যে যেখানে ডাক্তারের ভিজিট তিনশো থেকে হাজার টাকার দরজায় সেখানে দাঁড়িয়ে।দীর্ঘ কয়েক দশক ধরেই নিরবে তিনি সেবা করে চলেছেন অসংখ্য মানুষের। সকাল থেকে রাত বর্তমানে তাঁর ধ্যানজ্ঞানই তাঁর অর্জিত শিক্ষাকে সহ নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। ডা. গীষ্পতি চক্রবর্তী। এম.বি.বি.এস, ডি.পি.এইচ এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার তিনি। বর্ধমানের টিকরহাটের বাসিন্দা নয়নয় করেও গত কয়েক দশক ধরে খোদ বর্ধমান শহরে মাত্র ২০ টাকা ফি-এর বদলে রোগী দেখে চলেছেন। কিছুদিন আগেও যা ছিল মাত্র ১০ টাকা। সম্প্রতি তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ টাকায় তাতেও তাঁর আপত্তি ছিল অনেক। কিন্তু শুভানুধ্যয়ী এবং রোগীপক্ষের চাপেই তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ টাকায়। অবশ্য টাকা রোজগার তাঁর নেশা নয়, মানুষের কষ্ট লাঘব করা, তাঁদের সুস্থ রাখাই তাঁর জীবনের ব্রত করে নিয়েছেন এই চিকিত্সক। উল্লেখ্য, বর্ধমান শহর তথা খোসবাগান যা কিনা ডাক্তারপাড়া হিসাবেই পরিচিত এমনকি লিমকা বুক অব রেকর্ডসে এই খোসবাগানের ডাক্তারমহল্লার উল্লেখও রয়েছে। যেখানে ডাক্তারের ফি ক্রমবর্ধমান। কমবেশী গড়ে ৫০০ টাকা ডাক্তারদের ফি।
সেখানে মাত্র ২০ টাকা কেন? উত্তর দিয়েছেন ডাক্তারবাবু, তাঁর অর্থ রোজগারের প্রয়োজন নেই। তিনি সরকারী চাকরী করতেন। অবসর নিয়েছেন। অবসরকালীন যে পেনশন তিনি পান, তাতে দিব্যি চলে যাচ্ছে। আছে একটি স্কুটার। তাই দিয়েই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। চলে তো যাচ্ছেই। তাহলে এই কর্পোরেট দুনিয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে অধিক অর্থ উপার্জনের প্রয়োজন কি। ডা. গীষ্পতি চক্রবর্তী জানিয়েছেন, গড়ে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০টি রোগী দেখেন তিনি। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়মিত বসেন। এছাড়াও বর্ধমান শহরের মিঠাপুকুর, রসিকপুর চিলড্রেন পার্ক এবং টিকরহাট এলাকায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার চ্যারিটেবল ডিসপেনসারীতেও বসেন। এছাড়াও প্রায় নিয়মিতই সুন্দরবন এলাকায় যান শ্রমজীবী হাসপাতালে। তিনি জানিয়েছেন, এই কাজ করে তিনি আনন্দ পান। যখন রোগীরা সুস্থ হয়ে ওঠেন তখন তাঁদের খুশী মুখ দেখে তিনি পরিতৃপ্ত হন। উল্লেখ্য, ডা: গীষ্পতি চক্রবর্তীর জন্ম ১৯৫৮ সালে। আড়িয়াদহ কালাচাঁদ হাই স্কুল থেকে হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করে প্রথমে ভর্তি হয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। কিন্তু শিক্ষকদের পরামর্শে বর্ধমান মেডিকেল কলেজে পড়তে আসেন ডাক্তারি। ডাক্তারি পাশ করে চাকরি শুরু করেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল অফিসার হিসেবে।
তারপর থেকে মানুষের সেবাই হয়ে উঠল নিরন্তর এক সাধনা। ঠার্কুদা গোপালচন্দ্র বিদ্যানিধি একসময় ময়মনসিংহ থেকে কলকাতায় সংস্কৃত কলেজ আসতেন অ্যাকাডেমিক কাজে। দেশ ভাগের পর পাকাপাকি ময়মনসিংহ থেকে কলকাতায় চলে এসে আড়িয়াদহে বাড়ি তৈরি করেন।বাবা গোবিন্দলাল চক্রবর্তী পড়েছেন স্কটিশচার্চ কলেজে। ডাক্তারীর পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রবন্ধ, গল্প লেখেন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। দশকের পর দশক গ্রামে গ্রামে ঘুরে মানুষকে বুঝিয়েছেন শিশু ও মায়ের স্বাস্থ্যের যত্ন ও নানা রোগ সম্পর্কে। তাঁরই উদ্যোগে নিয়মিত প্রকাশিত হয় ‘স্বাস্থ্য ও মানুষ’ পত্রিকা। ডাক্তারবাবু জানিয়েছেন, বর্তমান সময়ে চিকিত্সকদের ফি নিয়ে যা বলা হচ্ছে তা একেবারেই সংশ্লিষ্ট চিকিত্সকদের নিজস্ব ব্যা পার। তবে এটা ঠিকই রাজনৈতিক অভিসন্ধিমূলক কর্পোরেট দুনিয়ার প্রবল চাপের মধ্যে রয়েছেন চিকিত্সকরাও। তারই মাঝে তাঁর একটাই সাধনা – তিনি সহ নাগরিকদের পাশে থাকতে চান। একইসঙ্গে আক্ষেপও ঝরে পড়েছে এই চিকিত্সকের গলায় – এই সমাজ ব্যবস্থায় তাঁরাই বেশি উপেক্ষিত, বঞ্চিত, অসহায় যাঁদের কিছু নেই। অথচ এই উপেক্ষিত, অসহায় মানুষগুলোই ক্ষমতায় নিয়ে আসে সরকারকে। ডাক্তারবাবু বলেছেন, যখন করোনা মহামারী, তখন গরু ছাগলের মত অসহায় মানুষদের গাদাগাদি করে ট্রাকে, বাসে, ট্রেনে নিয়ে আসা হয়েছে। আর যাঁরা সরকার গড়ার ক্ষমতা রাখেনা, সেই অভিজাত শ্রেণীকে নিয়ে আসা হয়েছে প্লেনে। ডা. গীষ্পতি জানিয়েছেন, যতদিন তিনি বাঁচবেন এভাবেই সহ নাগরিকদের তিনি পাশে থাকতে চান।