আধার কার্ড না থাকায় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা ঘর থেকে বঞ্চিত বিধবা মহিলা, রাত কাটাচ্ছে রান্না ঘরে
মালদা :দেবু সিংহ : ২০১৬ সালের প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও এখনো পর্যন্ত হলো না বিধবার ঘর। কেন ? উঠছে প্রশ্ন। আর কত গরিব হলে মিলবে সরকারি ঘর ? এই দুশ্চিন্তায় কাটছে বিধবার দিন। বিধবা মহিলার নাম সাবেরা বেওয়া। বাড়ি মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নং ব্লকের মহেন্দ্রপুর জিপির ভবানীপুর গ্রামে। একমাত্র ভাঙাচোরা রান্না ঘরেই কাটছে তার দিন। বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। নেই কোন পানীয় জলের ব্যবস্থা।পুকুরের জল দিয়েই করেন রান্নাবান্না। শৌচাগার না থাকায় মাঠই একমাত্র ভরসা। বসবাসের একমাত্র রান্নাঘরটিও এই বর্ষায় ভেঙে পড়েছে। দরজা হীন ঘরে পলিথিন টাঙিয়ে কোনরকমে কাটছে তার দিন। নেই কোন রেশন কার্ড। অর্ধাহারে-অনাহারে কাটছে দিন। প্রতিবেশীদের সহায়তায় কোনদিন একবেলা খাবার জোটে তো কোনদিন জুটেও না। স্বামী মারা যাবার কুড়ি বছর কেটে গেলেও হয়নি এখনো বিধবা ভাতা। পাইনি কোনোরকম সরকারি সাহায্য। ঢিল ছোড়া দূরত্বে রয়েছে পঞ্চায়েত সদস্যের ঘর। নিজের জানলা দিয়ে উঁকি মারলে দেখা যায় বিধবার ভাঙ্গাচোরা ঘরটি। দেখেও নীরব। সাহায্যের আশ্বাস টুকুও পায়নি বলে আক্ষেপ। তৃনমূল পরিচালিত মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েত থেকেও মিলেনি কোনো-রকম আশ্বাস।
জানা যায় সাবেরা বেওয়ার স্বামী সেখ সোনুয়া প্রায় কুড়ি বছর আগে অসুখে মারা যান। বাড়িতে রেখে যান স্ত্রী সহ চার কন্যা সন্তান। পুত্রহীন সংসারে হাল ধরার কেউ নেই। শুরু হয় বাড়িতে অভাব-অনটন।প্রতিবেশীদের সহায়তায় চার মেয়ের বিয়ে হলেও মাকে দেখাশোনা করার জন্য বাড়িতেই থেকে যান ছোট মেয়ে লিলিফা খাতুন। তারও দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।প্রায় ১৫ বছর ধরে মাঠে ধান কেটে, আন্য কারো বাড়িতে কাজ করে খুব কষ্টে দু’মুঠো অন্ন জোগাড় করে মায়ের মুখে তুলে দেন।
লিলিফা খাতুন জানান তার বাবা কুড়ি বছর আগে মারা যায়। একমাত্র রোজগেরে মারা যাওয়ায় পরিবারটি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। প্রতিবেশীদের সহায়তায় চার বোনের বিয়ে হলেও মাকে দেখাশোনা করার জন্য সে বাবার বাড়িতেই থেকে যায়। ১৫ বছর ধরে মায়ের সংসারকে আগলে রেখেছে সে। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই মা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। আর্থিক অভাব থাকায় চিকিৎসা করাতে পারেনি আজও। বাস্তু ভিটে ছাড়া তাদের কোনো জমি নেই। রয়েছে একটি ভাঙাচোরা ঘর। মেয়ে ও তিন নাতি-নাতনি ওই ভাঙাচোরা ঘরেই থাকেন। মা কখনো বাড়ির বারান্দায় কখনো আবার রান্নাঘরেই ঘুমান। বৃষ্টি হলেই চাল চুয়ে জল পড়ে। ঘরের উপরে টিনের ছাউনি থাকলেও দেওয়ালগুলিতে ঘুন ধরে খসে পড়ার ভয় রয়েছে। সকাল হতেই ফাঁকফোকর দিয়ে সূর্যের আলো ঘরটিতে প্রবেশ করে। প্রতিটা ইঁটে দারিদ্রতার ছাপ ফুটে উঠেছে। সরকারি ঘরের জন্য সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো লাভ হয়নি। আজও পর্যন্ত হয়নি বিধবা ভাতা।রেশন কার্ড না থাকায় পাচ্ছে না কোনো রেশন ।