সোমবার রাজ্যে কাজ যাচাইয়ে আসছেন কেন্দ্রীয় দল

একশো দিনের প্রকল্প এবং আবাস যোজনার কাজ সরেজমিনে দেখতে দিল্লি থেকে রাজ্যে আসছে কেন্দ্রীয় দল। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব আশিসকুমার গোয়েল বৃহস্পতিবার জেলাশাসকদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, কাল, সোমবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ‘ন্যাশনাল লেভেল মনিটর’-এরা দেশের ১০০টি জেলায় ওই দুই প্রকল্পের কাজ পর্যবেক্ষণ করবেন।এ রাজ্যের ১৬টি জেলায় ওই দল যাবে।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আগামী সপ্তাহে ছ’দিন ধরে গত দু’বছরে ১০০ দিনের প্রকল্পে কী-কী হয়েছে, আবাস যোজনার কাজ নিয়ম মেনে হয়েছে কি না, সরেজমিন পরিদর্শন করবে রাজ্যে আসা আটটি দল। পূর্ব বর্ধমান, দুই চব্বিশ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, দুই মেদিনীপুর, জলপাইগুড়ি, হুগলি, পুরুলিয়া, আলিপুরদুয়ার, বাঁকুড়া, মালদহ ও বীরভূম জেলায় তিন-চারটে ব্লকের ১০-১২টি পঞ্চায়েতে তারা ঘুরবে। জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) প্রিয়ঙ্কা সিংলা শনিবার বলেন, ‘সোমবার ওঁরা আসছেন।”

গ্রামোন্নয়ন দফতরের চিঠিতে কোভিড-বিধি মেনেই পর্যবেক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-এর শেষ দিকে আগে এ রকমই কেন্দ্রীয় দল এসে পূর্ব বর্ধমান ও হুগলিতে ১০০ দিনের কাজে বেশ কিছু ‘অনিয়ম’ খুঁজে পাওয়ার দাবি করে রাজ্যকে রিপোর্ট করে। তার ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েতকে টাকা ফেরতের নির্দেশ দেওয়া হয়। রাজ্য প্রশাসন সে সূত্র ধরে পঞ্চায়েতের কর্তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর-ও করেছিল।

বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষের দাবি, ‘এ রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার দুর্নীতি নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তথ্য দিয়ে এসেছিলাম। আর ১০০ দিনের কাজে সব থেকে বেশি টাকা পায় পশ্চিমবঙ্গ। সেখানেও দুর্নীতির অজস্র অভিযোগ। সে সব অভিযোগ খতিয়ে দেখতেই সম্ভবত কেন্দ্রের বিশেষ দল আসছে।” যদিও রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী পুলক রায় বলেন, ‘সারা দেশের ১০০টি জেলায় কেন্দ্রের দল পর্যবেক্ষণ করতে যাচ্ছে। আমাদের রাজ্যেও আটটি দল ১৬টি জেলায় যাবে। একদম রুটিনমাফিক আসছেন ওঁরা।”

এ বার কী দেখবে দলগুলি? জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দু’বছরের প্রকল্পের কাজের সব নথি ঠিক করে রাখতে বলা হয়েছে। প্রকল্পের কাজের সব রসিদ, ‘ক্যাশবুক’ থেকে সাতটি ‘রেজিস্টার’ যথাযথ ভাবে
পূরণ করে রাখার জন্য পঞ্চায়েতগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে প্রকল্পে কাজ চলছে, সেখানে যাতে কাজের নাম, বরাদ্দ, কাজের বিবরণ-সহ বোর্ড টাঙানো থাকে, তা-ও সুনিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’ বা ‘বাংলা আবাস যোজনা’য় ২১০ বর্গফুটের মধ্যে বাড়ি করার নিয়ম। তা মানা হয়েছে কি না, ‘যোগ্য’ প্রাপক বাড়ি পেয়েছেন কি না, ‘জিও ট্যাগিং’ যথাযথ হয়েছে কি না কিংবা বাড়ির বাইরে ‘লোগো’ দেওয়া বোর্ড লাগানোর মতো খুঁটিনাটি দেখা হবে।

কেন্দ্রের ‘ন্যাশনাল লেভেল মনিটরিং’ দলের অন্যতম এগজ়িকিউটিভ ডিরেক্টর সঞ্জয় সাক্সেনা বলেন, ‘শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, প্রথম পর্যায়ে দেশের ১০০টি জেলায় সরেজমিনে গিয়ে কেন্দ্রের ১০০ দিনের প্রকল্প ও আবাস যোজনা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এর পরে, আরও দু’টি পর্যায়ে ২০০টি জেলার বিভিন্ন পঞ্চায়েতে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হবে।” জানা গিয়েছে, কাজগুলি সরেজমিনে পরিদর্শনের পরে, ‘অনিয়ম’ দেখা গেলে, পর্যবেক্ষকেরা রাজ্য ও জেলা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট করবেন। সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত বা ব্লকের কাছে জবাব চাওয়া হবে। জবাবে সন্তুষ্ট না হলে, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *