কাটমানি দিতে না পারায় আবাস যোজনার ঘর মেলেনি বলে অভিযোগ

মালদা :- স্বামী অসুস্থ । একসময় ভ্যান চালাতেন। এখন আর কাজ করতে পারেন না। তিনি নিজেও অসুস্থ। পেটে পাথর হওয়ায় মাঝে মধ্যেই যন্ত্রনা হয়। কিন্তু চিকিত্সা করার সামর্থ্য নেই। তারমধ্যেও সংসার চালাতে পরিচারিকার কাজ করেন গয়া দাস।

বৃষ্টি হলে ঘরে জল চুইয়ে পড়তে থাকে। মাথায় ত্রিপল দিয়ে বসে থাকেন বৃদ্ধ দম্পতি। কিন্তু তার পরেও আবাস যোজনায় ঘর মেলেনি। তালিকায় নাম থাকলেও ২০ হাজার টাকা কাটমানি দিতে না পারায় বছর পেরিয়ে গেলেও তার ঘর মেলেনি বলে অভিযোগ। এবার ফের নতুন করে তালিকায় নাম এসেছে বলে জানতে পারেন। কিন্তু ফের টাকা চাওয়া হয়েছিল।

কিন্তু দাবি মতো টাকা দিতে না পারায় ঘর মিলছে না বলে অভিযোগ। বারবার আকুতি জানালেও মেলেনি বার্ধ্যক্য ভাতাটুকুও। রেশনের চালটুকু দিয়ে একবেলা নুন ভাত খেয়ে দিন কাটে দম্পতির। দম্পতির বাড়ি মালদহের চাঁচলের আমলাপাড়ায়। ওই এলাকাতেই বাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্যার। কিন্তু বৃদ্ধ দম্পতির দিকে তিনি ফিরেও তাকাননা বলে অভিযোগ।

আর কতটা অসহায় হলে মিলবে সরকারি সাহায্য, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বৃদ্ধা গয়া দাস। সরকারি সাহায্য না পেলে তাদের যে ম়ত্য ছাড়া গত্যন্তর নেই সেই অভিযোগ তুলে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। যদিও এই নিয়ে শুরু হয়েছে তৃণমূল বিজেপির-তরজা। যদি অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি, পাল্টা তীব্র কটাক্ষ শাসক দলের।

আমলাপাড়ায় ত্রিপল দিয়ে কোনও রকমে ঢাকা ভাঙাচোরা বাড়ি। গয়ার দুই ছেলের মধ্যে একজন মারা গিয়েছেন। আরেক ছেলে অন্য এলাকায় সংসার পেতেছেন! তারও নিজের খাবার জোটে না বলে বাবা-মাকে দেখতে পারেন না। বাড়িতে অসুস্থ স্বামী গৌর দাসকে নিয়ে থাকেন গয়াদেবী। স্বামী একচোখে দেখেন না। পাশাপাশি অসুস্থ হওয়ায় কাজও করতে পারেন না। গয়াদেবীরও কিডনিতে পাথর হয়েছে।

মাঝেমঝ্যেই ব্যাথায় কাতর হয়ে পড়েন। কিন্তু অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারেন না। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য আবেদন করলেও তা এখনও মেলেনি। জানা গিয়েছে, গত বছর আবাস যোজনার তালিকায় তার নাম রয়েছে বলে জানতে পারেন। কিন্তু পঞ্চায়েত সদস্যার দাবিমতো ২০ হাজার টাকা দিতে পারেননি। তাই ঘরও মেলেনি। এবারও তালিকায় নাম রয়েছে বলে কয়েকজন তার বাড়িতে আসেন। ফের টাকা চান।

কিন্তু দিতে না পারায় ঘর মিলবে না বলে আশঙ্কায় রয়েছেন তিনি।
গয়াদেবী বলেন, বেশিরভাগ দিন নুন দিয়ে ভাত খেয়ে থাকি। শরীরে না কুলোলেও অন্যের বাড়িতে কাজে যেতে হয়। বৃষ্টি হলেই ঘরে জল পড়ে। ত্রিপল মুড়ে সারারাত জেগে বসে থাকি। বার্ধ্যক্য ভাতাটাও মেলেনি। আমার তো একটা টাকাও দেওয়ার ক্ষমতা নেই। এভাবে বেঁচে থেকে কি লাভ। সরকারি সাহায্য না পেলে মরা ছাড়া পথ নেই।

বিজেপির স্থানীয় সদস্য পম্পা চৌধুরী বলেন, আবাস যোজনার তালিকায় নাম থাকলেও উনি পঞ্চায়েতে নথি জমা দেননি বলে ঘর পাননি। এখন বদনাম করতে কাটমানি চাওয়ার অভিযোগ তোলা হচ্ছে। পম্পা বলেন, বাড়ি বসে তো কেউ কিছু করে দিবে না। বার্ধ্যক্য ভাতা বা অন্যান্য সুবিধার জন্য আমার সঙ্গে দেখা করতে হবে, পঞ্চায়েতে যেতে হবে।

তৃণমূলকে ভোট দেওয়ায় বিষয়টি শুনেছেন চাঁচলের বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ। ক্ষুব্ধ বিধায়ক বলেন, সরকারি সাহায্য না পেয়ে কেউ মৃত্যুর কথা ভাবছেন এটা ভীষন লজ্জার। আমার কাছেও অভিযোগ এসেছে। পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য অমিতেশ পাণ্ডে ওদের ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। কিন্তু মহিলাটি তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে। তাই বিজেপির স্থানীয় সদস্যা ওকে ঘর দিচ্ছেন না! টাকা চাইছেন। আমি বিডিওকে বিষয়টি জানিয়েছি। সব খতিয়ে দেখে বৃদ্ধার সঙ্গে বঞ্চনা হলে এফআইআর করার কথা বলেছি।

বিজেপি জেলা সম্পাদক কিষান কেডিয়া বলেন বিজেপি কখনো কাটমানি ইস্যুতে বিশ্বাসী নয়। বিজেপিকে চক্রান্ত করে ফাসাবার উদ্দেশ্যে এ সমস্ত অভিযোগ তোলা হচ্ছে। এগুলো তৃণমূলের পরিকল্পিত চক্রান্ত। আমাদের দলের যদি কেউ যুক্ত থাকে তাহলে প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে ব্লক জেলা পরিষদ সমস্ত জায়গাতেই তৃণমূলের শাসন চলছে। বিজেপির সদস্যদের কোন পাত্তা দেওয়া হয় না। বিজেপির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তার সমস্ত ভিত্তিহীন।

চাঁচল ১ ব্লক বিডিও সমিরন ভট্টাচার্য জানান অভিযোগ জমা পড়েছে, পুরো বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।
কিন্তু অসুস্থ শরীরে গয়াদেবীকে পঞ্চায়েত সদস্যার সঙ্গে আরও কতবার দেখা করতে হবে, কতদিনে কীভাবে সাহায্য মিলবে সেই প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *