চন্দ্রচূড় জগদ্ধাত্রী পূজার সূচনা করেন ব্রহ্ম শাসনে

নদীয়া জেলার এই শান্তিপুর শহরেই স্বপ্নদোষে জগদ্ধাত্রী মূর্তি স্থাপন ও তন্ত্র মন্ত্রের সূচনা হয় শান্তিপুর হরিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ব্রাহ্মশাসনে।

নগর শহর শান্তিপুরের অনতি দূরে ব্রহ্মশাসন। নদীয়া জেলার এই শান্তিপুর শহরেই স্বপ্নদোষে জগদ্ধাত্রী মূর্তি স্থাপন ও তন্ত্র মন্ত্রের সূচনা হয় শান্তিপুর হরিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ব্রাহ্মশাসনে। যা এক সময় নদীবন্দর ভাগীরথীর ধারেই গড়ে উঠেছিল। নদীকে কেন্দ্র করে হরিপুর ছাড়িয়ে ব্রহ্মশাসন ১০৮ ঘর ব্রাহ্মণ ও ঘোষ সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল। সে সময় নদিয়ার রাজা ছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের পিতা রঘু রায়। তারপর কৃষ্ণচন্দ্র রাজা হলে তিনি রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে সহায়তা না করে মিরজাফর কে সাহায্য করেন। যার ফলে তিনি নদিয়া রাজ উপাধি পান। ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে রবার্ট ক্লাইভ মিরজাফর কে সরিয়ে মীরকাসীম কে সিংহাসনে বসানোর পর সমগ্র নদিয়ায় বকেয়া কর নিয়ে কৃষ্ণচন্দ্রের বিবাদ বাধে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষ নেওয়ার জন্য রাজা কৃষ্ণচন্দ্র কর দিতে অস্বীকার করলে মীরকাসীম কৃষ্ণচন্দ্রকে আটক করে বিহারের মুঙ্গেরের জেলে বন্দী করেন।

কারণ ক্ষমতা পাওয়ার পরই মীরকাসীম তার রাজধানী মুর্শিদাবাদ থেকে সরিয়ে মুঙ্গেরে স্থাপন করেছিলেন। ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে পাটনায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও মীরকাসীমের যুদ্ধ বাধলে এক রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। বিচক্ষণ রাজা কৃষ্ণচন্দ্র সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মুঙ্গের থেকে পলায়ন করেন। জলপথে ফেরার সময় ধুবুলিয়া অঞ্চলের রুকুনপুর অঞ্চলে তিনি দেখেন দুর্গা প্রতিমা নিরঞ্জনের দৃশ্য। তার প্রিয় আরাধ্যা দেবী দুর্গা রাজরাজেশ্বরীর পূজা না করতে পারার কারণে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র খুব ব্যথিত হন। সেই রাতেই রাজা স্বপ্নাদেশ পান দেবীর। দেবী আদেশ দেন আগামী কার্তিকী শুক্লা তিথিতে তিন দিনের জন্য পূজার ব্যবস্থা করতে। সেই পূজা হবে সম্পূর্ণ দুর্গা মন্ত্রেই। দেবীর নাম হবে জগতের ধাত্রী জগধাত্রী নামেই।দেবীর কোন রূপ পাওয়া যায় না। দেবী ঘটেই পূজিতা হন।

রাজবাড়ীতে পুজিতো দেবী জগদ্ধাত্রী খুব অল্প সময়েই পরিচিত লাভ করেন। এদিকে ব্রহ্মশানের ব্রাহ্মণ পণ্ডিত চন্দ্রচুর তর্ক রত্ন পঞ্চানন মায়ের স্বপ্নাদেশ পান। স্বপ্নে দেবী বলেন, তুই আমার পূজা কর। ঘুম থেকে উঠে দেখবি তোর ঘরের দেওয়ালে রবির প্রভা বিকশিত হবে। ঐটিই হবে আমার রঙ। আমি সিংহ বাহিনী। স্বপ্নাদেশ পালন করে চন্দ্রচূড় জগদ্ধাত্রী পূজার সূচনা করেন ব্রহ্ম শাসনে। ১৮০২ খ্রিস্টাব্দ থেকে কৃষ্ণচন্দ্র রাজার পুত্র গিরিশচন্দ্রই নদিয়ার রাজা হন। তার কাছে খবর গেলে তিনি চন্দ্রচুর তর্করত্ন পঞ্চাননকে ডেকে পাঠান। বিভিন্ন বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়ার পর রাজা গিরিশচন্দ্র চন্দ্রচুর তর্করত্ন কে তার রাজসভায় থাকার অনুরোধ করেন। সেই সঙ্গে অনুরোধ করেন দেবীর পূজার মন্ত্র পদ্ধতি তিনি ভাবনা করবেন। রাজার অনুরোধেই চন্দ্রচুড় তন্ত্র সাধনায় বসেন। স্বয়ং মার জগদ্ধাত্রী, তার পূজার পদ্ধতি ও মন্ত্র চন্দ্রচুড় তর্করত্ন পঞ্চানন কে বলেন। সেই নিয়ম মেনেই রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে আজও জগদ্ধাত্রী পূজিত হয়ে আসছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *