সাংসদ সুনীল মণ্ডলকে ঘিরে গ্রামবাসীদের বিক্ষোভ
বিধানসভা ভোটের সময়ে বিজেপিতে ভিড়ে গিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছিলেন সাংসদ সুনীল মণ্ডল। ভোটে বিজেপির ভরাডুবির পরেই ‘তৃণমূলেই আছি’ বলে দাবি করলেও সুনীল মণ্ডল তৃণমূল কর্মীদের মন ভোলাতে পারেননি। যার পরিণাম মিলল বুধবার। নিজের সংসদীয় এলাকা পূর্ব-বর্ধমানের কাটোয়ায় গিয়ে কার্যত ঘাড় ধাক্কা খেলেন তৃণমূল সাংসদ সুনীল মণ্ডল।তাঁকে ঘিরে ওঠে গোব্যাক স্লোগান। পাশাপাশি গ্রামবাসীরা সুনীলবাবুকে চোর বলেও সম্বোধন করেন । কাটোয়ায় তাঁকে ফের প্রবেশ করতেও নিষেধ করেন গ্রামবাসীরা।
উত্তেজনা চরমে উঠতে থাকায় নিরাপত্তারক্ষীরা তড়িঘড়ি সাংসদকে নিয়ে গ্রাম ছাড়েন। বিক্ষোভে আটকে পড়েও সুনীল মণ্ডল মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন। কিন্তু এই ঘটনায় কাটোয়াজুড়ে এ দিন শোরগোল পড়ে যায়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে ,কাটোয়ায় মালঞ্চ থেকে দেয়াসিন যাওয়ার পথে পাকা সেতু তৈরির কাজ পাঁচ বছর ধরে থমকে ছিল। ঠিকাদার বদলে সম্প্রতি ফের নতুন করে কাজ শুরু হয়েছে ।এদিন সেই কাজই পরিদর্শনে গিয়েছিলেন সাংসদ সুনীল মণ্ডল।
মালঞ্চ এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, তৃণমূলের প্রতীকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন সুনীল মণ্ডল। সংসদ তহবিল থেকে এই মালঞ্চ সেতু তৈরির জন্য ২০১৮ সালে ২ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। ব্রম্ভানী নদীর উপরে কয়েকটি পিলার তৈরির কাজ হয়েছে মাত্র। তারই মধ্যেই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কাজ অসমাপ্ত রেখেই কাজ ছেড়ে দেয়। এরপরে সেতু নির্মানের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরে ফের অন্য ঠিকাদার কাজ শুরু করেছে। সেতু তৈরির কাজে যুক্ত লোকজনের গত ৫ বছররে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা পাওনা রয়েছে।
সাংসদ বার বার প্রতিশ্রুতি দিলেও সেই টাকা আজও মেলেনি। এছাড়াও বিধানসভা ভোটের সময়ে বিজেপিতে গিয়ে কাটোয়ার তৃণমূল বিধায়ক সহ তৃণমূলের নেতাদের নানা হুমকি দিয়েছিলেন সাংসদ। এইসবেরই ক্ষোভই এদিন আছড়ে পড়েছে বর্ধমান পূর্বের সাংসদ সুনীল মণ্ডলের উপর ।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া গ্রামবাসী আশীষ কুমার মণ্ডল বলেন, ‘সেতু তৈরির কাজে যুক্ত হয়ে গ্রামে অনেক শ্রমিক টাকা পাননি। সাংসদ সুনীল মণ্ডল আমাদের টাকা ফেরতের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু আজও তা দেননি।’
আরেক বাসিন্দা তুফান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী তাঁরা ২০১৮ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৭ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার মালপত্র সাপ্লাই করেছি। কিন্তু আজও সেই টাকা পাইনি।’
যদিও সুনীল মণ্ডল বলেন , ‘সেতু তৈরির কাজের ঠিকাদারের সঙ্গে গ্রামবাসীদের যে চুক্তি হয়েছিল তা আমার জানা নেই। আগের ঠিকাদার এখন আর কাজ করছে না। ওই ঠিকাদার বলছে এরা দু-চার লক্ষ টাকা পাবে। অথচ গ্রামবাসীরা বলছে ২০ লক্ষ টাকা পাবে। গ্রামবাসীদের সঙ্গে ওই ঠিকাদারের গন্ডোগোল মিটিয়ে দেওয়ার কথা আমি জেলাশাসককে বলেছিলাম। এরমধ্যে তো আর আমি নেই।’
পাশাপাশি সুনীল মণ্ডল এও বলেন , ‘একটা ভুল বোঝাবুঝির জন্য আমি বিজেপি তে চলে গিয়েছিলাম। সেটা তো মিটে গিয়েছে। আমি এখন তৃণমূলের সঙ্গেই আছি। সেটা মমতা দিদিও জানেন।’ এদিকে সাংসদ সুনীল মণ্ডলকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো প্রসঙ্গে কাটোয়ার বিধায়ক তথা পূর্ব-বর্ধমান জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন,’বিক্ষোভের বিষয়ে আমার জানা নেই। কি নিয়ে বিক্ষোভ সেই বিষয়ে খোঁজ নেব। তবে কাজ করে যদি টাকা পাওনা হয়ে থাকে তা মেটানো উচিত।’