বাঁকুড়া জেলার সবচেয়ে বিখ্যাত মিষ্টি হলো মেচা সন্দেশ
বাঁকুড়া:সৈয়দ মফিজুল হোদা — খাদ্য রসিক বাঙালি যেখানেই ঘুরতে যাক দর্শনীয় স্থানের পাশাপাশি খাবার খোঁজ ঠিকই রাখেন। আর সে খাবার যদি মিস্টি হয় তাহলে তো আর কোনো কথাই নেই। পর্যটকেরা যারা বাঁকুড়া বা পুরুলিয়া জেলার দর্শনীয় স্থান গুলি ঘুরতে যায় তারা বেলিয়াতোড়ের পাশ দিয়ে অবশ্যই যায়, তারা কি আর বিখ্যাত এই ‘মেচার’ স্বাদ গ্রহন না করে যায়, একবার হলেও মনে পড়ে যায় দূর থেকে কল্পনার এই বিখ্যাত মিষ্টির কথা।
পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার সবচেয়ে বিখ্যাত মিষ্টি হলো মেচা সন্দেশ। বাঁকুড়া জেলার পাশাপাসি এই মিষ্টান্ন নজর কেড়েছে সারা বাংলার, এমন কি বিদেশেও পাড়ি দিয়েছে এই মিষ্টি। মূলত মুগডাল আর চিনি দিয়ে তৈরি হয় এই সন্দেশ সাথে ক্ষির বা চাঁছিও মেশানো হয়, দাম কোনোটি ১০ টাকা পিস তো কোনোটি ৫ টাকা।
এই মেচার আদি শ্রষ্টাকে এই বিষয়ে স্পষ্ট ধারনা কোথাও আজও পাওয়া যায়নি, এই নিয়ে মতো বিরোধ আজও চলছে। তবে বেলিয়াতোড়ের মেচা প্রস্তুতকারকদের মতে এই মেচার ইতিহাস প্রায় দেড়শো থেকে দুইশো বছরের।এরকম জনশ্রুতি প্রায় শোনা যায় যে বিষ্ণুপুরের মল্লরাজাদের দেওয়ান রাজার কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন বেলিয়াতোড়ের জমিদারি। সেই সময় নাকি প্রথম মেচা প্রস্তুতি শুরু হয় এবং ‘জমিদারী মিষ্টির’ উপাধি পায় এই সন্দেশ। একটা মত অনুযায়ী অনেকেই বলে থাকেন এই মেচার শ্রষ্টা নাকি গিরিশ চন্দ্র মোদক নামে এই পরগনার একজন মিষ্টান্ন ব্যাবসায়ী। কথিত আছে তখনকার দিনে এই জেলার বিভিন্ন জায়গায় বাবা শিবকে কেন্দ্র করে গাজনের মেলা বসত সেখানে এই গিরিশ বাবু গুড়ের লাড্ডু বিক্রি করতেন, দীর্ঘদিন রাখার পর সেই গুড়ের পাগ নষ্ট হয়ে যেত সেখান থেকেই অভিনবত্ব আসে তৈরি শুরু হয় মেচা সন্দেশের। ইংরেজ আমলেও নাকি এই প্রসিদ্ধ মেচা সন্দের খ্যাতি লাভ করে। এই মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারকদের আদি বাসস্থান বেলিয়াতোড় হলেও তারা বর্তমানে জেলা এবং রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে বিদ্যমান।
তবে ইতিহাস যাইহোক স্বাদে এবং অভিনবত্বে বাংলায় এই মিষ্টান্নর জুড়ি মেলা আজও ভার। বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ের এই মেচার ব্যাবসায়ী থেকে শুরু করে প্রস্তুত কারকদের দাবী আধুনিক যুগের ঘেরাটোপে যেভাবে জি.আই স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলা প্রসিদ্ধ রসগোল্লা বা বর্ধমানে মিহিদানা ঠিক সেভাবেই জি.আই স্বীকৃতি পাক এই বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ের মেচা।