শেষবারের মতো স্বামীকে দেখতে যাওয়ার অনুমতি পেল না

গলসি :রাজীব মন্ডল -লক ডাউন এর পাকে পরে কয়েকশো কিলোমিটার ভৌগোলিক দূরত্বের মাঝেই শেষ হয়ে গেলো সদ্য গড়ে ওঠা একটা নতুন সংসার। 

৮৭৪ কিলোমিটার দূরত্বে স্ত্রী কে রেখে চলে গেলেন তারাদের জগতে চিরকালের জন্য 

 সুজাতার স্বামী।

 মাত্র মাস চারেক আগে বিয়ে হয়েছিল সুজাতার । উত্তরপ্রদেশ থেকে  বাবা-মায়ের সঙ্গে মামার বাড়ি ঘুরতে আসে সুজাতা লক ডাউন এর ঠিক আগে। আটকে পড়লেন লকডাউনে।আর তাতেই শেষ হয়ে গেলো জীবনের সব চাওয়া -পাওয়া ,আনন্দ ,সুখ -আল্লাদ। 

 এই সময়ে হটাৎ সব কিছু ছেড়ে তারাদের জগতে পারি দিলো সুজাতার স্বামী। সুজাতা? কাছে থাকতে পারলেন না মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লরা স্বামীর পশে।’একবার শেষবারের মতো দেখতে চাই তোমায়, ফিরে এসো…’ফোনের অপরপ্রান্তে মৃত্যুর সাথে লড়তে থাকা স্বামীর কাতর আবেদন শুনে সুজাতা ছটফট করেছে যন্ত্রনায় ,বেদনায়।বহু লড়াই করেছেন সব বাধা তুচ্ছ করে স্বামীর কাছে ছুটে  চলে যেতে… কিন্তু যন্ত্রনা ,বুকফাটা কান্না ছাড়া আর কিছুই করতে পারেননি তিনি।পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল যে লকডাউনের  প্রশাসনিক বিধিনিষেধ। সংসারের শুরুর মুখে  সব হারাতে হলো সুজাতাকে।


 সুজাতা গৌতম , বাড়ি উত্তরপ্রদেশের ফিরোজাবাদে। চার মাস আগে উত্তরপ্রদেশের  বাসিন্দা অজয় গৌতমের সঙ্গে বিয়ে হয় তার ।মাত্র  তিন মাস সংসার করেন। বাবামায়ের সঙ্গে ঘুরতে আসেন পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের গলসিতে, তাঁর মামাবাড়িতে। সেটাই তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল  হল।
মামার বাড়িতে লকডাউনে আটকে পড়েন সুজাতা।অন্যদিকে, ফোনে জানতে পারেন স্বামী ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত। ফোনে  রোজই কথা ,শেষদিনও হয়েছিল। সুজাতাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসার জন্য বারবার বলেছিলো অজয়। সুজাতা ফোন হাতেই ঘুরে বেরিয়েছেন এক থেকে অন্য প্রশাসনিক দফতরে। একবার যাতে তাঁকে যেতে দেওয়া হয় তাঁর রাজ্যে, স্বামীর কাছে।
কিন্তু প্রশাসনিক কর্তা দেরও হাত পা বাঁধা ,তারা যে নিরূপায়। আন্তঃরাজ্য সীমান্ত সিল। তাই আর স্বামীর কাছে যেতে পারেননি সুজাতা। শেষে বৃহস্পতিবার  এল সেই মর্মান্তিক খবর! অজয় আর নেই। কান্নায় ভেঙে পড়েন সুজাতা। ‘একবারের জন্য দেখতে পেলাম না তাঁকে…এবার তো অন্তত যেতে দিন’ গলসি থানায় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তিনি। কিন্তু এবারও অনুমতি পেলেন না তিনি। স্বামী হারালো সুজাতা, ঘর করা হল না তাঁর।চার মাস আগে বাঁধা ঘর ,স্বপ্ন সব যেন এক নিমেষে কোথায় মিশে গেলো।শেষ বারের মতো দেখা হলো না স্বামী কে ……শেষ দেখাও না। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *