বিধায়ককে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য,ভাইরাল জেলা পরিষদ সদস্যার স্বামীর অডিও ক্লিপ

মালদা ২৫জুন: ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপ নিয়ে অস্বস্তিতে তৃণমূল। ভোটের আগের এক অডিও ক্লিপ ভাইরাল হতেই প্রকাশ্যে এসেছে শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দল।আর যা নিয়ে রীতিমতো সরগরম হয়ে উঠেছে এলাকার রাজনীতি। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের বর্তমান তৃণমূল বিধায়ক তজমুল হোসেনের বিরুদ্ধে জেলা পরিষদ সদস্যা মমতাজ বেগমের স্বামী তৃণমূল নেতা আমিনুল হকের বলা এক অডিও ক্লিপ সামনে আসায় শুরু হয়েছে জলঘোলা তৃণমূলের অন্দরে। অডিও ক্লিপ সহ সেই নেতার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বকে। শুক্রবার সকাল থেকেই এই নিয়ে বৈঠকে বসেছে মালদা জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। চরম অস্বস্তিতে জেলা তৃণমূল। অডিও ক্লিপ শুনে বোঝা যাচ্ছে হরিশ্চন্দ্রপুরের তৃণমূলের নেতা আমিনুল জনৈক তৃণমূল কর্মীকে বলছেন, এলাকায় যাঁকে তৃণমূল প্রার্থী করেছে সে চামার। একজন ক্রিমিনাল। বন্যাত্রানের কোটি কোটি টাকা সে আত্মসাৎ করেছে। বাংলা আবাস যোজনার যে ২০০-২৫০ কোটি টাকা আসবে তাও আত্মসাৎ করবে। তিনি আরও বলেন, একারণেই তিনি ভোটের লড়াইয়ে থাকতে চান না।আড়ালেই আছেন। তিনি আবার সেই তৃণমূল কর্মীকে ভোটের কাজে নামতে নিরুৎসাহিতও করেন।

যদিও কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে ভোটের আগে ফোনে কথোপকথন এটি। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতেই এই কথপোকথন কিছু তৃণমূল নেতার হাতে আসতেই ভাইরাল। আর তা নিয়েই নতুন করে বিপাকে তৃণমূল। যদিও তজমুল হোসেন এবং আমিনুল দুজনের মধ্যে তীব্র কোন্দল দলের মধ্যে স্পষ্ট। এরইমধ্যে এই অডিও ক্লিপ হাতে আসায় নতুন করে জলঘোলা শুরু হয়েছে। এই অডিও ক্লিপ নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছে বিজেপি। অন্যদিকে আমিনুলের দাবি এসব তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। এই সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। অডিও ক্লিপের গলা তার নয়। এদিকে তৃণমূল নেতৃত্ব কড়া অবস্থান নিচ্ছে আমিনুলের প্রতি। তাদের দাবি দলের মধ্যে থেকে যারা দলের ক্ষতি করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এতে দলের ভাবমূর্তি ঠিক হবে। এদিকে এই ঘটনার ফলে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল একদম প্রকাশ্যে এসে পড়েছে।

তৃণমূলের মালদা জেলার সাধারণ সম্পাদক বুলবুল খান বলেন,”ভোটের আগেই এই অডিও ক্লিপ আমরা পেয়েছিলাম।প্রশান্ত কিশোরের টিমকে দেওয়া হয়েছিল।কিন্তু ভোটের আগে প্রকাশ্যে আনতে চাইনি।আমাদের প্রত্যেকটা কেন্দ্রে যেই প্রার্থী হোক মানুষ মমতা ব্যানার্জিকে প্রার্থী ভেবে ভোট দিয়েছে।তাই এখানে তজমুল দার বদনাম মানে মমতা ব্যানার্জির বদনাম। উনি একজন জন-প্রতিনিধি হয়ে দলে থেকে দলের বিরুদ্ধে যা করলেন তা একদম ঠিক নয়। এদের জন্য দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। দেখা যাক উচ্চ নেতৃত্ব কি পদক্ষেপ নেয়।”

এদিকে যার অডিও ক্লিপ নিয়ে তোলপাড় হরিশ্চন্দ্রপুরের রাজনীতি সেই তৃণমূল নেতা আমিনুল হক তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করছেন। তিনি অডিও ক্লিপের সত্যতা মানতে চান নি। তিনি বলেন,” এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। অডিও ক্লিপের গলা আমার নয়। ভোটে আমার অঞ্চল থেকে যেভাবে লিড দিয়েছি তার থেকেই প্রমাণ আমি দলের জন্য কিরকম কাজ করেছি। আমার স্ত্রী জেলা পরিষদের সদস্য তার প্রতিনিধিরূপে আমি অঞ্চলে যেভাবে কাজ করেছি এরকম কাজ মালদা জেলার কোন প্রতিনিধি করেনি। কন্যাশ্রীর প্রচারে একমাত্র ফুটবল টুর্নামেন্ট উত্তরবঙ্গে আমি প্রথম করিয়েছি। কিছু মানুষ তাই আমাকে কালিমালিপ্ত করার উদ্দেশ্যে এইসব ষড়যন্ত্র করছে।”

এদিকে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে বিজেপি। বিজেপির জেলা সম্পাদক কিষান কেডিয়া কটাক্ষের সুরে বলেন,” এই অডিও ক্লিপটা থেকে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসছে। এই দলটাই শুধু গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের আর কাটমানির। মানুষ বুঝতে পারবে এদের ক্ষমতায় এনে কি ভুল করেছে। এইসব ঘটনা থেকেই মানুষ শিক্ষা নেবে। তারপর ঠিক আমাদের ক্ষমতায় আনবে।”

হরিশ্চন্দ্রপুর তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কোন নতুন ঘটনা নয়। কিন্তু এবার বিধানসভা ভোটে হরিশ্চন্দ্রপুরে প্রথমবারের মতো তৃণমূল জিতেছে। কিন্তু ভোট মিটতে আবার প্রকাশ্যে চলে আসছে গোষ্ঠী কোন্দল। আর এই গোষ্ঠী কোন্দল দুই হেভিওয়েট নেতা। একদিকে বিধায়ক অন্যদিকে জেলা পরিষদ সদস্যার স্বামী। দলীয় নেতৃত্ব এই ঘটনাকে কিভাবে সামাল দেয় সেটাই এই মুহূর্তে দেখার বিষয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *