উত্তরবঙ্গের সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। সর্বশেষ তথ্য (১০ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখের) অনুযায়ী, পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে, তবে ক্ষয়ক্ষতি এবং ত্রাণ ও পুনর্গঠনের কাজ এখনও চলছে।
নীচে উত্তরবঙ্গের বর্তমান বন্যা পরিস্থিতির বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলো:
🌊 উত্তরবঙ্গের বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি (অক্টোবর ২০২৫)
উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার এবং কালিম্পং জেলাগুলি প্রবল বৃষ্টিপাত, ভূমিধস এবং উজানের (ভুটান ও সিকিম) জল ছাড়ার ফলে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

১. হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির চিত্র

- মৃত্যু সংখ্যা: সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বন্যায় মৃতের সংখ্যা ৩৯ থেকে ৪০ জন (বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী)। এর মধ্যে বহু মানুষ ভূমিধস ও বন্যায় প্রাণ হারিয়েছেন।
- আহত ও নিখোঁজ: অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন, এবং উদ্ধারকারী দলগুলি এখনও তল্লাশি চালাচ্ছে।
- ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা: দার্জিলিংয়ের মিরিক মহকুমা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেখানে ভূমিধসের কারণে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া জলপাইগুড়ির গজলডোবা, লাটাগুড়ি, বানারহাট, বিন্নাগুড়ি, এবং কোচবিহার শহরও জলমগ্ন হয়েছিল।
Read More – বৃষ্টির দিনে বানিয়ে ফেলুন চিকেন খিচুড়ি
- গৃহহীন: প্রায় ৯,৫০০-এরও বেশি দুর্গত মানুষ ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। আনুমানিক ৬,০০০-এর বেশি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
- সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি: দার্জিলিং এবং কালিম্পং জেলায় রাস্তার ক্ষতি, সেতু ভেঙে যাওয়া, এবং অন্যান্য পরিকাঠামোগত ক্ষতির আনুমানিক হিসাব প্রায় ১০.৬২ কোটি টাকা।
- কৃষি ও বনভূমি: প্রায় ১৮,৫০০ হেক্টর কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে জলপাইগুড়ি জেলাতেই ১৪,০০০ হেক্টর জমি রয়েছে। চা বাগানগুলিও (কমপক্ষে ৩০-৩৫টি) ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিস্তা, তোর্সা, মালঙ্গি, ও হলং নদীর জল জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর ঢুকে যাওয়ায় বন্যপ্রাণীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; বহু গন্ডার ও হরিণকে নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে।
Read more : https://www.facebook.com/reel/686971177783971
- ২. যোগাযোগ ব্যবস্থা (রেল ও সড়ক)
- সড়ক যোগাযোগ:
- পাহাড়ে অনেক গ্রামীণ রাস্তা ভূমিধসের কারণে বন্ধ বা ক্ষতিগ্রস্ত।
- শিলিগুড়ি থেকে মিরিকের একমাত্র সরাসরি রুট দুধিয়ার বালাসন নদীর উপর লোহার সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। তবে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ছোট গাড়ি চলাচলের জন্য অস্থায়ী ব্রিজ তৈরির কাজ চলছে।
- রেল যোগাযোগ:
- উত্তরবঙ্গের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।
- নিউ জলপাইগুড়ির পরের রেল পরিষেবা ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ব্যাহত হতে পারে, কারণ জলঢাকা নদীর উপর ক্ষতিগ্রস্ত রেল সেতু এবং বানারহাট ও নাগরাকাটার মধ্যের রেললাইন মেরামতির কাজ চলছে। বহু দূরপাল্লার ট্রেন হয় বাতিল হয়েছে বা ঘুরপথে চলছে।
Read More:
- ৩. ত্রাণ ও উদ্ধারকার্যক্রম
- উদ্ধার ও ত্রাণ: NDRF (জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী), রাজ্য সংস্থা এবং সেনাবাহিনী উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে নিয়োজিত আছে।
- মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং মৃতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য এবং পরিবারের একজনকে হোম গার্ডের চাকরি দেওয়ার ঘোষণা করেছেন।
- অন্যান্য সহায়তা: সৌরভ গাঙ্গুলি ফাউন্ডেশন ইসকনের মাধ্যমে দুর্গতদের জন্য খাদ্য সামগ্রী পাঠিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কমিউনিটি কিচেন চালানো হচ্ছে এবং কৃষিজমি নষ্ট হওয়া পরিবারগুলির জন্য কৃষিবিমার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
- পর্যটকদের জন্য বার্তা: আটকে পড়া পর্যটকদের আপাতত তাড়াহুড়ো না করে যেখানে আছেন সেখানেই থাকতে বলা হয়েছে এবং হোটেলগুলিকে পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া না নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৪. পরিস্থিতির বর্তমান অবস্থা (১০ অক্টোবর, ২০২৫)
বৃষ্টিপাত কমার সঙ্গে সঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিকের দিকে এগোচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কোনো মৃত্যুর খবর নেই। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট মেরামতের কাজ জোরকদমে চলছে, ফলে পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকার মধ্যে যোগাযোগ কিছুটা উন্নত হয়েছে। তবে, নিচু এলাকায় জল নামা সত্ত্বেও বহু মানুষ এখনও ত্রাণ শিবিরে আছেন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য পরিকাঠামো পুনর্গঠনের কাজ চলছে।
আপনি যদি উত্তরবঙ্গের কোনো নির্দিষ্ট এলাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও জানতে চান তবে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।