স্ট্র্যাটেজিস্টের কাজ ছেড়ে অন্য কিছু করবেন প্রশান্ত কিশোর

নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজিস্ট বা কৌশল রচনাকারীর ভূমিকা ছাড়তে চান প্রশান্ত কিশোর। ভোটকুশলী পরিচয়েই খ্যাত প্রশান্ত কিশোর জানিয়েছেন, জীবনে অন্য কিছু করার সময় হয়েছে বলে তিনি মনে করছেন। ২০২১ এর বিধানসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসের নিরঙ্কুশ প্রাধান্য নিয়ে তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সকালে গণনার শুরু থেকেই ঝড়ের বেগে এগতে থাকে ঘাসফুল। বেলা যত বাড়তে থাকে, গণনায় ছবিটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তৃণমূল বিজেপির থেকে সহস্র যোজন এগিয়ে। আর এই প্রশ্নাতীত সাফল্যের নেপথ্যের মূল কারিগর যিনি, সেই প্রশান্ত কিশোর সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমি যে কাজটা করছি, তা আর চালিয়ে যেতে চাই না। অনেক করেছি। এবার আমার একটা বিরতি নিয়ে জীবনে অন্য কিছু করার সময় হয়েছে। এই ক্ষেত্রটা থেকে আমি সরে যেতে চাই।
তাহলে তিনি কি তৃণমূল ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গেমপ্ল্যান মাফিক সাফল্য এনে দেওয়ার পর নিজে রাজনীতির ময়দানে ফের পা রাখতে চাইছেন? কী তাঁর আগামী পরিকল্পনা? সরাসরি জবাব না দিয়ে তিনি বলেছেন, আমি ব্যর্থ রাজনীতিক। আমায় পিছনে ফিরে গিয়ে ভাবতে হবে, কী করতে পারি।
প্রসঙ্গত, অতীতে বিজেপির হয়ে নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজিস্টের ভূমিকা পালন করা প্রশান্ত কিশোরকে মমতা কয়েক বছর আগে নিজের দলের ভোটকুশলী ম্যানেজারের দায়িত্ব দেন ২০১৯ এর লোকসভা ভোটে এরাজ্যে বিজেপির কাছে অপ্রত্যাশিত ধাক্কা খাওয়ার পর। তিনি দায়িত্ব পেয়েই গ্রামবাংলায় নিজের টিমকে নামিয়ে দেন। তাঁর আইপ্যাক সংস্থা গ্রামগঞ্জে শাসক দলের সংগঠনে অদলবদল থেকে শুরু করেন। কাদের দিয়ে লাভ হবে, সেই সুপারিশ করেন। এমনকী অতীতে গ্রামে গ্রামে শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে কাটমানি নেওয়ার যে অভিযোগ ওঠে, তার মোকাবিলায় কাটমানি ফেরানোর কর্মসূচি নেয় শাসক দল। জেলায় জেলায় শাসক দলের লোকজন কাটমানি ফেরাতে শুরু করেন। এটা প্রশান্ত কিশোরেরই প্ল্যান ছিল। এবারের বিধানসভা ভোট সামনে রেখে বিজেপির আক্রমণাত্মক প্রচারের মুখে ‘দুয়ারে সরকা’র, ‘বাংলা নিজের মেয়েকে চায়’ এর মতো কর্মসূচি, স্লোগান তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত।
ভোটের প্রচারে বিজেপি শীর্ষনেতারা যে এবার ২০০ পার বলে নবান্ন দখলের ঘোষণা করেছিলেন, তার পাল্টা প্রশান্ত বলেছিলেন, বিজেপি ১০০ পেরলে তিনি ট্যুইটার ছাড়বেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর কৌশলে যে সাফল্য এল, তা পরিষ্কার। এবারের নির্বাচন প্রসঙ্গে তাঁর অভিমত, আমরা একটা চরম খারাপের মধ্যে ছিলাম। নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত একপেশে ভূমিকা পালন করে, আমাদের প্রচারের কাজটা কঠিন করে দেয়। কিন্তু আমরা খুব ভাল করব, এই বিশ্বাস ছিল। মানুষ যতটা দিতে চেয়েছে, তার চেয়ে বেশি জিতেছে তৃণমূল। বিজেপি বিরাট প্রচার চালিয়েছে যে, ওরা বাংলা জিতে নেবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা আছে মানে এই নয়, বিজেপি সব ভোটে জিতবে।সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার ডাক দেন তিনি। বলেন, কমিশন বিজেপিরই সম্প্রসারিত শাখা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *