বন্ধ ২৪৪ বছরের মহিষাদলের রথ
তুহিন শুভ্র আগুয়ান; হলদিয়াঃ সালটা ১৯৩২। তৎকালীন পরাধীন ভারতে ব্রিটিশদের অত্যাচারের প্রতিবাদে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল শতাব্দী প্রাচীন মহিষাদলের রথযাত্রা। এরপর ফের ১৯৩২ সালের পুনরাবৃত্তি ২০২০ সালে। তবে এবার ব্রিটিশদের অত্যাচারের প্রতিবাদে নয়। এবার মহিষাদলের রথযাত্রা বন্ধ করোনা ভাইরাসের কথা মাথায় রেখে। সরকারের তরফ থেকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার কথা বলা হয়েছে। সেই জায়গায় মহিষাদলের রথযাত্রায় প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ ভিড় জমান। তাই এই ভিড় এড়ানোর জন্য ইতিমধ্যে মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতি ও মহিষাদল রাজ পরিবারের তরফ থেকে ২৪৪ বছরের এই রথ টানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মহিষাদলের ইতিহাসের পাতা উল্টালে জানা যায়, ১৯৩২ সালে তখন ভারতে ব্রিটিশদের অত্যাচার চরমে। এমন সময় ওই বছর রথের দিন এক স্বাধীনতা সংগ্রামীর ওপর চরম অত্যাচার চালায় ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনী। যার প্রতিবাদে রথ একবার টানার পর রথ টানা বন্ধ রাখে দর্শনার্থীরা। তারা ব্রিটিশদের অত্যাচারের প্রতিবাদে দাবি জানায় ,হয় পুলিশকে ক্ষমা চাইতে হবে নচেৎ ততকালীন সতেরো চূড়া রথের মাথায় লাগাতে হবে ভারতের জাতীয় পতাকা। আর এই টানাপোড়েনের মাঝে ওই বছর এখানে বন্ধ হয়ে যায় রথ টানা। এরপর থেকে অবশ্য রথ টানা স্বাভাবিক নিয়মেই চলতে থাকে। কিন্তু বর্তমান চলতি বছরে বিশ্ব মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ইতিমধ্যে রথ টানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে মাঙ্গলিক সমস্ত আচার বিধি পালন করা হবে।
রাজা আনন্দলাল উপাধ্যায়ের সহধর্মিণী ধর্মপ্রাণ রানী জানকি দেবী মহিষাদলের রথের সূচনা করেছিলেন। মহিষাদল রাজ পরিবারের এই প্রাচীন রথের অন্যতম দ্রষ্টব্য বিষয় হল এই রথে জগন্নাথ দেবের সঙ্গে যান রাজবাড়ীর কুলদেবতা গোপালজিউ। তবে অন্যান্য বছর হাজার হাজার দর্শনার্থীর কাছির টানে রথে চড়ে মাসি বাড়ি গেলেও এবার জগন্নাথদেব ও গোপালজিউ মাসির বাড়ি যাবেন রাজবাড়ীর পালকি চড়ে। মহিষাদলের ঘাঘরা গ্রামে এক সপ্তাহ কাটানোর পর ফেরত রথের দিন ফের পালকি চড়ে জগন্নাথ ও গোপালজিউ ফিরবেন বাড়িতে। এর পাশাপাশি এবছর ভিড় এড়ানোর জন্য সমস্ত দোকানপাট বসার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। মহিষাদল রাজ পরিবারের সদস্য হরপ্রসাদ গর্গ বলেন, “আমি পূর্বপুরুষদের কাছে শুনেছি তখন একবার রথ বন্ধ ছিল। তারপর এবার ২০২০ সালে বন্ধ মহিষাদলের রথ টানা। কোভিড ১৯ ভাইরাসের প্রকোপ এড়ানোর জন্য এই সিদ্ধান্ত” .