রাজ্যে শিল্প সম্ভাবনার নতুন ক্ষেত্র পানাগড় ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব
পানাগড় ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাবে (Panagarh Industrial Park) বুধবার একটি বেসরকারি পলিফ্লিম কারখানার শিলান্যাস করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকে রাজ্যের শিল্প সম্ভাবনার নতুন বার্তা দিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাবে (Industrial Hub) একটি নয়, আরও ১২টি কারখানার নির্মাণকাজ চলছে জোড়কদমে।
আগামী এক বছরের মধ্যেই কয়েকটি কারখানা উত্পাদন শুরু করতে চায়।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এর ফলে বদলে যেতে পারে পশ্চিম বর্ধমান জেলার শিল্পচিত্র। বাণিজ্যিক দিক থেকে আরও অনেক উপরে উঠে আসতে পারে পশ্চিমবঙ্গ।
প্রশাসনিক সূত্রে এখনও পর্যন্ত যা খবর, তাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে পলিফ্লিম কারখানাটির উদ্বোধন করবেন, সেখানে ৪০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ করছে বেসরকারি সংস্থাটি। তবে পলিফ্লিম কারখানা ছাড়াও, আরও বারোটি কারখানার নির্মাণকাজ চলছে সেখানে। যে তালিকায় রয়েছে, ফুড প্রসেসিং থেকে পাইপ ফ্যাক্টরি-সহ অন্যান্য সংস্থা। যার মধ্যে কয়েকটি সংস্থা, আগামী এক বছরের মধ্যেই নিজেদের উত্পাদন শুরু করে দিতে চায়।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাবে পরপর বেশ কয়েকটি কারখানার উত্পাদন শুরু হলে, সেখানে কর্মসংস্থান হতে পারে কয়েক হাজার বেকার যুবক যুবতীর। স্থানীয় কর্মহীন মানুষের কর্মসংস্থানের আশাও জোরালো হচ্ছে এই শিল্প উপনগরীকে কেন্দ্র করে। পাশাপাশি উত্পাদন শুরু হলে, বাণিজ্যিক দিক থেকে শক্তিশালী হবে পশ্চিম বর্ধমান জেলা।
প্রসঙ্গত, দুই নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে কাঁকসা এবং আউসগ্রাম ব্লকের প্রায় দেড় হাজার একর জমি সংরক্ষিত রয়েছে পানাগড় ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাবের জন্য। বাম আমলে এখানে শুরু হয় জমি অধিগ্রহণের কাজ। তৃণমূল সরকার গঠনের পর ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাবের (Industrial Hub) দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়।
ইতিমধ্যে ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাবে একটি ফার্টিলাইজার সংস্থা নিজেদের উত্পাদন চালিয়ে যাচ্ছে। রয়েছে একটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরিও। তবে এতদিন বেশিরভাগ জমি ফাঁকা পড়েছিল। কিন্তু বিশাল পরিমাণ পড়ে থাকা জায়গায় নতুন করে শিল্পসম্ভাবনার ছবি উঠে আসছে। আগামী দিনে এই এলাকার চিত্র বদলে যেতে পারে বলে আশা জেলা প্রশাসনের। বেশকিছু সংস্থা তাদের নিজেদের উত্পাদন এই জায়গায় করতে প্রস্তুতি শুরু করেছে ইতিমধ্যেই।
পানাগড় ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাবের (Panagarh Industrial Hub) জন্য এই জায়গাকে বেছে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। প্রথমত, দুই নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে এই জায়গাটির অবস্থান হওয়ায় পরিবহনের ক্ষেত্রে তা অনেক সুবিধা করে দেবে। তাছাড়াও ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব থেকে অল্প দূরত্বের মধ্যে রয়েছে আসানসোল, দুর্গাপুরের মত বড় স্টেশনগুলি। এছাড়াও প্রয়োজনীয় কয়লা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব (Industrial Hub)।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাবের হাতের কাছেই রয়েছে বিদ্যুত্ উত্পাদনকারী সংস্থাগুলি। এছাড়াও এখানে, নিজেদের দুটি পেট্রোল পাম্প তৈরি করেছে ইন্ডিয়ান অয়েল। বেসরকারি একটি সংস্থা, নিজেদের উত্পাদিত পণ্য পরিবহনের জন্য, রেললাইন পাতার কাজ ইতিমধ্যে শেষ করেছে। সব মিলিয়ে পানাগড় শিল্পতালুকে গড়ে ওঠা কারখানাগুলি, প্রয়োজনীয় জিনিস খুব সহজেই হাতের কাছে পাবে। ফলে শিল্পনগরী দুর্গাপুরের উপকণ্ঠে অবস্থিত ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাবে, নতুন শিল্প দিগন্ত খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশ জোরালো বলেই মনে করছেন ব্যবসায়ী থেকে শিল্প বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের আশা, ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাবে সমস্ত কারখানাগুলি চালু হলে, রাজ্যের কয়েক হাজার বেকার যুবক যুবতীর কর্মসংস্থান হবে। স্থানীয় মানুষজন এই এলাকায় কাজ করতে পারবেন। এর ফলে, একদিকে যেমন শ্রমিক সমস্যা মিটবে কারখানা কর্তৃপক্ষগুলির, ঠিক তেমনভাবেই কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে স্থানীয়দের।
করোনা মহামারীর দীর্ঘ সময়ে, কর্মচ্যুত হয়েছেন অনেকেই। এই মুহূর্তে, রাজ্যে ছোট শিল্পগুলি ভালো অবস্থায় থাকলেও, বড় শিল্পগুলি কিছুটা কঠিন সময়ের মধ্যে নিজেদের অতিবাহিত করছে। এইসময় ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব শিল্প সম্ভবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে উঠে আসায়, কর্মচ্যুতদের কর্মসংস্থানের আশা বাড়ছে। ঠিক তেমনভাবেই বাণিজ্যিক দিক থেকেও পশ্চিম বর্ধমান জেলা এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হাত শক্ত হতে চলেছে আগামীদিনে।