বিধায়ক পদ খারিজ হলেও মুকুল ও শুভ্রাংশুর পাশে তৃণমূল
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে প্রার্থী হয়েছিলেন মুকুল রায়। জিতেও যান সেই ভোটে। কিন্তু তারপরে পরেই শিবির বদল করতে বিন্দুমাত্র সময় নেননি তিনি। বিজেপি ছেড়ে চলে এসেছেন তিনি ঘাসফুল শিবিরে।তাও একা আসেননি, সঙ্গে এনেছেন পুত্র শুভ্রাংশুকেও। কার্যত রায় বাড়ির সঙ্গে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সুসম্পর্ক আবারও গড়ে উঠেছে।
সেই সুসম্পর্কের জেরেই মুকুল রায় ও তাঁর পরিবারের পাশেই থাকতে চায় তৃণমূল। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছেন মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ খারিজের জন্য। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই মামলার রায় যাই আসুক না কেন তৃণমূল মুকুল-শুভ্রাংশুদের পাশেই থাকবে। আদালত যদি মুকুলের বিধায়ক পদ খারিজও করে তাহলেও ওই আসন থেকেই মুকুল বা শুভ্রাংশুকে ফের টিকিট দেবে তৃণমূল।
মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ খারিজের জন্য বিজেপি আগে রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেই আপিল করেছিল। সেই আবেদনের শুনানি এখনও শেষ হয়নি। কার্যত তা শেষ হওয়ার আগেই বিজেপির তরফে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা ঠুকেছেন শুভেন্দু। তাঁর দাবি অবিলম্বে মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ খারিজ করতে হবে। এক্ষেত্রে তাঁর আইনি হাতিয়ার হয়েছে মণিপুরের একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্টেরই একটি রায়।
সেই মামলায় দেশের শীর্ষ আদালত রায় দিয়েছিল, কোনও বিধায়ক দলত্যেগ করলে তাঁর বিধায়ক পদ নিয়ে রাজ্য আইনসভাকে ৩ মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেই রায়কে সামনে রেখেই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা ঠুকেছেন শুভেন্দু। এদিন থেকেই সেই মামলার শুনানি শুরু হওয়ার কথা। তবে তৃণমূল শিবির এই মামলা নিয়ে মোটেই মাথা ঘামাচ্ছে না। বরঞ্চ তাঁরা আগামী দিনে বেশ কয়েকটি আসনে উপনির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু মুকুল বা শুভ্রাংশুর ক্ষেত্রেই নয় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যে সব বিধায়ক আসছেন তাঁদের প্রত্যেকের পাশেই দলীয় নেতৃত্ব সমসময় থাকবে। যদি তাঁদের বিধায়ক পদ বাতিল হয় তাহলে ওই সব আসনে ফের উপনির্বাচন করাতে হবে। সেই ক্ষেত্রে সম্ভবত ওই বিধায়ককেই ওই আসনে ফের তৃণমূলের তরফে টিকিট দেওয়া হবে।
বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মুকুলের পাশাপাশি যে সব বিধায়ক দল ছেড়ে তৃণমূলের পথে পা বাড়িয়েছে তাঁদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা করে প্রথমে বিধানসভার অধ্যক্ষের কাছে আবেদন জানানো হবে তাঁদের বিধায়ক পদ বাতিলের জন্য। যদি সেই আবেদনে কাজ দেয় তো ভালো, নাহলে আদালতে মামলা দায়ের করা হবে।
তবে রাজ্য বিজেপির অপর একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তড়িঘড়ি করে মুকুল বা অনান্য বিধায়কদের বিধায়ক পদ বাতিলের বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করার বিষয়টি ভালো চোখে দেখছে না।
কেননা, দলছুট বিধায়কদের বিধায়ক পদ বাতিল হয়ে গেলে এক তো তাঁর ওপর বিজেপির আর কোনও নিয়ন্ত্রণই থাকবে না, তারওপর ওই আসনের উপনির্বাচনে বিজেপি জিততেও হয়তো পারবে না। সব মিলিয়ে একতরফা ক্ষতির মুখে বিজেপিকেই পড়তে হবে।
তাই মুকুলের বিরুদ্ধে আদালতের রায় কী হচ্ছে তা দেখেই সম্ভবত পরবর্তীকালে দলছুট অন্য বিধায়কদের ক্ষেত্রে আদালতে মামলা দায়ের করার কথা ভাবা হবে। একই সঙ্গে বিজেপির একটি সূত্র জানিয়েছে, শুভেন্দু অধিকারী যেভাবী ব্যক্তিগত বিরোধকে দলীয় পদক্ষেপে রূপান্তরিত করে চলেছেন সেটিও দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ভালো চোখে দেখছে না। তাই আগামী দিনে শুভেন্দুর কার্যকলাপও নিয়ন্ত্রিত হতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। কেননা শুভেন্দুর কার্যকলাপে বেশ কিছু ক্ষেত্রে শুভেন্দু নিজে মুখ্য হয়ে উঠছেন, দল গৌণ হয়ে পড়ছে যা সঙ্ঘ নেতৃত্বের নাপসন্দ।