দিঘায় মোবাইল ভেন্ডিং কারের উদ্বোধন মুখ্যমন্ত্রীর

তুহিন শুভ্র আগুয়ান; দিঘাঃ সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে রাজ্যের উপকূলবর্তী যেকটি জেলা ব্যাপক পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার মধ্যে প্রথমেই নাম রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের। বেশ কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে সৈকত শহর দিঘা সহ আশেপাশের অঞ্চলগুলিতে। দিঘার পর্যটন ব্যবসার সাথে যুক্ত ব্যবসায়ীদের দোকানপাট ইয়াসের প্রভাবে একেবারে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। লকডাউনের মাঝে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছিলেন তারা। এবার সেই সমস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে এসে দাঁড়ালো রাজ্য সরকার। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পরেই দিঘাতে রিভিউ মিটিং করে গেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের কাছ থেকে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নেওয়ার পাশাপাশি নিজে সমুদ্র পাড়ে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রত্যক্ষ করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। এরপর বৃহস্পতিবার সেই সমস্ত দিঘা এলাকার দোকানদারদের পাশে দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার বিকেলে নবান্ন থেকে ভার্চুয়ালি ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদারের জন্য মোবাইল ভেন্ডিং কারের উদ্বোধন করেন মমতা। এরপর সেখান থেকেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার জেলাশাসকের হাত ধরে ৫২টি দোকানদারের হাতে মোবাইল ভেন্ডিং কার তুলে দেওয়া হয়। এছাড়াও সৈকত তীরবর্তী যে সমস্ত দোকানগুলো ব্যাপক পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেই সমস্ত দোকান সম্পূর্ণভাবে সারিয়ে ১১৪টি দোকানের চাবি মমতার ভার্চুয়ালি উপস্থিতিতে তুলে দেওয়া হয় ব্যবসায়ীদের হাতে। 

ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে মমতা এদিন বলেন, “প্রথম শর্ট টার্ম প্লানে আমরা ঝড়ে যে সমস্ত দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যেসব স্টল মালিকদের দোকান পুরোপুরিভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছে তাদের আমরা আজ মোবাইল ভ্যান্ডিং কার ৫২ টি তুলে দিচ্ছি। এছাড়াও যেসব দোকানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেগুলোর শাটার পাল্টে ১১৪টি দোকানের চাবি তুলে দিচ্ছি। দিঘাতে বৈদ্যুতিক চুল্লিটাও নষ্ট হয়ে গিয়েছিল ওটাও আমরা সারিয়ে দিচ্ছি।” প্রায় প্রত্যেক বছর রাজ্যে লাগাতার ঘূর্ণিঝড়ের ঘটনা ঘটে চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, “ডিএসডিএ, ইরিগেশন, পিডব্লুডি, পাওয়ার, ফিসারি এবং ফরেস্ট সবাইকে নিয়ে আমরা দুটো মাস্টার প্ল্যান করছি। একটি সুন্দরবন মাস্টারপ্ল্যান এবং আরেকটি দিঘা মাস্টারপ্ল্যান। প্রত্যেক বছর ধরে চলে এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার থেকে কিভাবে আমরা বাঁচতে পারি তার জন্য আমরা ২৪ জন সদস্যের একটি এক্সপার্ট টিম তৈরি করেছি। এছাড়াও আমরা রাজ্যজুড়ে পূর্ব মেদিনীপুরে ৫ কোটি এবং দুই ২৪ পরগনায় ১০ কোটি ম্যানগ্রোভ আমরা লাগাচ্ছি। এতে আমরা মানুষকে ঝড় ও তাণ্ডবের হাত থেকে অনেকটাই রক্ষা করতে পারবে।” দিঘা সৈকত শহর প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, “দিঘা রাজ্যের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। আমিই প্রথম দিঘা- তমলুক ট্রেন চালু করেছিলাম। ১১সালের পর থেকে দিঘায় আমরা কনভেনশন সেন্টার, দিঘা গেট, বিশ্ববাংলা উদ্যান, মেরিন ড্রাইভ দিয়ে নতুনভাবে সাজিয়ে তুলেছিলাম। কিন্তু ইয়াস এসে সমস্ত কিছু ছারখার করে দিয়েছে। তা সত্ত্বেও আমরা যতটা পেরেছি মানুষকে সাহায্য করতে পেরেছি। যেহেতু রাজ্যের অর্থনীতিতে অনেকটা চাপ পড়েছে সেজন্য আমরা তিনটে প্ল্যান করে কাজগুলো এগাবো। দিঘা, শংকরপুর, তাজপুর, মন্দারমনিকেও আমরা নতুনভাবে সাজিয়ে তুলেছি।”

এদিন দিঘায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার জেলাশাসক পূর্ণেন্দু কুমার মাঝি। তার হাত ধরেই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের হাতে মোবাইল ভেন্ডিং কার ও দোকানের চাবি তুলে দেওয়া হয়। ব্যবসায়ীদের অভিনন্দন জানান মুখ্যমন্ত্রী। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *